ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে যেভাবে বদলে গেছে বিশ্ব

0
137

 ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে যেভাবে বদলে গেছে বিশ্ব

The way the world has changed on the Ukraine-Russia issue

AVvXsEiBx46bFISlGegGsE4Yu7Jg5QaSx nsBpijF3fi RPtdpMCSYzvJdscSRYvy C2GJqzWzyGVcEnCxG8DTvisFIiJbW6pUURbZ3e5 WoEjkWPUxL pFvP7hu3bu2F0jppc3UIP2m0Z1gPLQxmN5J9D2 sup aS0WWLwtF9MH1dnFHKM 5tJwwMBYoge=s320ইউক্রেনে পুরোদস্ত্তর সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। রবিবার রুশ বাহিনী টানা ১১ দিনের মতো হামলা অব্যাহত রাখে। ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরে বোমা হামলা চলছে। রুশ সেনা হামলা শুরুর পর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছে শত শত সামরিক-বেসামরিক মানুষ। লাখ লাখ মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত। ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সর্বোচ্চ।

এই হামলা ইউক্রেনকে যেমন বিধ্বস্ত করছে তার প্রভাব তেমনি পড়ছে বিশ্বেও। কায়রো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত খাদ্যের ও জ্বালানির দামে প্রভাব ফেলেছে রাশিয়ার এই আগ্রাসন। এই হামলা বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার ভাবে বিশ্বকে বদলে দিয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা।

প্রথমত, ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বদলে দিয়েছে রুশ হামলা। এই হামলা ৯/১১ মার্কিন হামলার পর যে ভূ-রাজনৈতিক ওয়ার্ল্ড অর্ডার ছিল তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী হামলার পর পশ্চিমা নেতাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদে। আল-কায়েদা এবং আইসিস ছিল অভিন্ন শত্রু যাদের দমন করা জরুরি ছিল।

AVvXsEiS9LY2Xh4AtnnNeWllq2vTnAcoUPNsB bqbYO siGkMZJnP9Tg01vJm5F05rfrUY6cyF0tOCC8QwZuGGg5jOc7HgxOu4FVmsjqWAKJHNnDiWyQkGlTকিন্তু ক্রেমলিনকে কখনো আগের মতো হুমকি হিসেবে দেখেনি পশ্চিমা বিশ্ব। ২০১২ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর ভূ-রাজনৈতিক শত্রু বলে দাবি করেছিলেন। যে কারণে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী অর্ডার বদলে দিতে চান সে আগ্রহ তখনো দেখিয়েছিলেন।

২০০০ সালে সাবেক কেজিবি গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুতিন দায়িত্ব নেওয়ার সময় রাশিয়ার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে-পরে চেচনিয়া, জর্জিয়াতে তিনি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছেন। সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ এখনো তার সহায়তায় টিকে আছেন। ২০১৪ সালে পুতিন সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়াকে নিজেদের ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেন। এরপরও কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্লেয়ার’ হিসেবে থেকে যান পুতিন।

রাশিয়া আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল। তারা ইউরোপের শীর্ষ জ্বালানি সরবরাহকারী এবং ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে তাদের সহায়তা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেনে তাদের সামরিক অভিযানে সব শেষ হয়ে যেতে পারে। ইউরোপে পুতিন এখন ‘অস্পৃশ্য’ মানুষে পরিণত হতে পারেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে বলেছেন, এখন পুতিন যে কোনো সময়ের থেকে বেশি বিচ্ছিন্ন।

AVvXsEiY6gb9wGW7p5jgFtBzi7IR0OlQoNepCDnghKSXAxnIlO0ZW31iYVOZDQxmu pnLKlBjFSRNNTG3ofSYiIEl7sKVrecFvtirMeD8yk7EOCfzPXlVUMMGNkR1GDReUzWObfSknJadGOn0j9AgpzBvbt8OJLGHD sSOQW1UsWGFPRYpAn8Pe9qY7R57zj=s320দ্বিতীয়ত, এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ। ইউক্রেনে হামলার পর পশ্চিমা বিশ্ব এক হয়ে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে ভেঙে পড়তে পারে রুশ অর্থনীতি। ইউরোপে এ ধরনের ঐক্য কয়েক সপ্তাহ আগেও ভাবা যায়নি। এই যুদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করেছে। এই জোট তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করছে। রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে। এই জোট প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র কিনতে অর্থ দিচ্ছে। জার্মানি যারা দীর্ঘদিন ধরেই পররাষ্ট্রনীতি থেকে সামরিক বিষয়টি আলাদা রেখেছিল, তারা এখন ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা তাদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্হা শক্তিশালী করতে।

তৃতীয়ত, শরণার্থী জোয়ার। ইউক্রেনে ১১ দিনের সামরিক অভিযানের মাথায় বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছে ১৫ লাখের বেশি মানুষ। এটি সাম্প্রতিকালের মধ্যে দ্রুত ও সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের দেশ ছাড়ার ঘটনা। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মতে, আরো খারাপ সময় আসছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইউরোপ নজিরবিহীন শরণার্থী সংকটের মুখে পড়বে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্হার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডির মতে, গত ৪০ বছরে এমন শরণার্থীর ঢল তিনি খুব কমই দেখেছেন।

চতুর্থত, বিশ্বে খাদ্য থেকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৫ সালে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার পর গ্যাসের দাম এখন সর্বোচ্চ। গত বছরে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে।

AVvXsEgRqzJ8Z4erS9zc KZChl9c8 hl3FDhoC2RQmXK5av8Zlt3X567tKnmsneH4CeWD7fUTKcsvkEy 1NI aJ1FyXবিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, খাদ্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে। মুডিস বলছে, করোনার কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ইতিমধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আরো বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে এই যুদ্ধের কারণে। বিশ্বে শেয়ার বাজারগুলোতে অস্হিরতা চলছে। জ্বালানির কথা চিন্তা করলে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান মানবিক ও আর্থিক সংকট ডেকে আনবে। কারণ ইউরোপ জ্বালানির জন্য অনেকাংশে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এখন রাশিয়া সরবরাহ বন্ধ করলে দুর্ভোগে পড়তে হবে ইউরোপকে। সেটা না হলেও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি পাওয়া তাদের জন্য আর সস্তা ও সহজ হবে না।

ইউক্রেনকে ইউরোপের ‘ব্রেডবাস্কেট’ বলা হয়। এই যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ইউক্রেনের তৃতীয় সর্বোচ্চ গম ক্রেতা ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here