এরদোয়ানের সাথে ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট কী প্রভাব ফেলেছিল ওজিলের ক্যারিয়ারে

0
104
ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট

জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলার মেসুত ওজিল মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তাকে তার প্রজন্মের সেরা ফুটবলারদের একজন মনে ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট করা হয়।

নিজের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ওজিল ক্লাব এবং জার্মাানির হয়ে মোট ৬৪৫টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। তিনি মোট ১১৪টি গোল করেছেন এবং ২২২টি গোলে সহযোগিতা করেছেন।

ওজিল তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল, জার্মান লিগের ক্লাব শালকে ০৪, ওয়ের্ডার ব্রেমেন, ফেনেরবাখ, স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদ, ইস্তানবুল বাসাকসেহিতে খেলেছেন।

তবে বুধবার মানে ২২শে মার্চ ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা এলেও, ওজিল অনেক দিন ধরেই ছিলেন ফুটবলের আলোচনার বাইরে।

একটা সময় তার ক্যারিয়ারে ফুটবল ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল রাজনীতি আর সে সংক্রান্ত আলোচনা।

বর্ণবাদসহ নানা ইস্যুতে তার অবস্থান এবং বক্তব্যের জন্য তিনি আলোচিত হয়েছেন বারবার।

জার্মান ফুটবলের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন ওজিল।

গত বছর হয়ে যাওয়া কাতার বিশ্বকাপেও মেসুত ওজিলের ছবি নিয়ে মাঠে আসেন সমর্থকরা, জার্মানি পরপর দুই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারদের একজন ছিলেন ওজিল।

চীন সরকারের উইঘুর নীতির বিরুদ্ধে একটি মন্তব্য মেসুত ওজিলের জীবন বদলে দিয়েছিল।

ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের মুসলিম ফুটবলার ওজিলের বেতন কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয় ক্লাবটি। এরপর, একটা সময় ইউরোপের শীর্ষ ফুটবল থেকে হারিয়ে যান মেসুত ওজিল।

এসব কিছুর শুরু হয়েছিল একটি টুইট থেকে ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে

উইঘুরদের দুর্দশায় মুসলিম বিশ্ব নীরব কেন?
ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট

দুই হাজার উনিশ সালে মেসুত ওজিল উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকারের নীতির প্রতিবাদ করে একটি ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট করেছিলেন।

তখনই ওজিলকে সাবধান করে দিয়েছিলেন তার কাছের মানুষেরা, তার এজেন্ট, আর তার বন্ধুরা।

চীন বিশ্ব ফুটবলের জন্য একটা বড় বাজার হিসেবে বিবেচিত।

চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবোতে মেসুত ওজিলের ফলোয়ার ছিল ৬০ লাখের মতো, চীনে মেসুত ওজিলে ফ্যান ক্লাবও ছিল, ওই টুইটের পর এসবই হারিয়েছেন ওজিল।

ফুটবল বিশ্বের চীনা বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়।

কিন্তু চীনের শিনজিয়াংয়ে উইঘুর ও টার্কিক সম্প্রদায়ের মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের একের পর এক তথ্য আসতে থাকে সংবাদমাধ্যমে

দুই হাজার বাইশ সালের শুরুর দিকে ‘শিনজিয়াং পুলিশ ফাইল’ নামে পরিচিত এইসব নথি বিবিসির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল।

ওজিল মনে করেন, এ বিষয়ে কথা বলা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

এদিকে, তুর্কী বংশোদ্ভূত মুসলিম ফুটবলার মেসুত ওজিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ানের ঘনিষ্ট লোকদের একজন।

ওজিলের বিয়েতে ‘বেস্ট ম্যান’ হিসেবে ছিলেন এরদোয়ান, এতোটাই কাছের মানুষ তারা।

চীনের উইঘুর নীতির সমালোচনা করা সেই টুইটের ফল আসতে শুরু করে ধীরে ধীরে।

কী ছিল মেসুত ওজিলের সেই টুইটের পেছনে

মেসুত ওজিল: এরদোয়ানের সাথে ছবি ও উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট যে প্রভাব  ফেলেছিল তার জীবনে - BBC News বাংলা
ওজিল উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট

দুই হাজার আঠারো সালে বিবিসির একটি তদন্তে বেড়িয়ে আসে, চীনের কড়া নিরাপত্তা সম্বলিত কয়েকটি বন্দিখানায় দশ লাখেরও বেশি লোককে রাখা হয়েছে, যাদের অনেকেই চীনের উইঘুর মুসলিম কমিউনিটির।

দুই হাজার উনিশ সালের ডিসেম্বর মাসে মেসুত ওজিল একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উইঘুর মুসলিমদের ‘যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যা দেন, এবং চীনের উইঘুর নীতি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নীরবতার প্রতিবাদ জানান।

ক্লাব হিসেবে আর্সেনাল তখন মেসুত ওজিলের ওই টুইটের সাথে নিজেদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বিবৃতি দেয়, “আর্সেনাল সবসময়ই একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান”।

চীন ধারাবাহিকভাবে উইঘুর মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।

চীনা কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে বলেছিল, ধর্মীয় উগ্রতা রুখতে তারা ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে’ রেখে তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।

ওই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় ‘প্রো ইভল্যুশন স্কয়ার ২০২০ গেমসে’র চীনা সংষ্করণ থেকে মেসুত ওজিলের নাম সরিয়ে নেয়া হয় প্রথমে।

এরপর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে আর্সেনালের এক ম্যাচের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তখন বলেছিলেন, “ওজিল, ‘ভুয়া খবরে প্ররোচিত হয়েছেন’।”

আর তখন থেকেই ওজিল আর্সেনালের নিয়মিত একাদশে অনিয়মিত হয়ে পড়েন।

স্পেনের ক্লাব রেয়াল মাদ্রিদ থেকে আর্সেনালে যোগ দেয়ার পর ২৫৪টি ম্যাচ খেলা ওজিল উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে টুইট করার পরে মাত্র ১০টি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন।

লম্বা সময় তিনি স্কোয়াডেই জায়গা পাননি।

দুই হাজার বিশ সালের অক্টোবরে ওজিল গণমাধ্যমে বলেন,” আমি প্রতি সপ্তাহেই ইতিবাচক ভাবার চেষ্টা করছি, তাই এতদিন ধরে আমি চুপ ছিলাম।

আমি আর্সেনালের প্রতি নিবেদিত এবং এটা ভেবেই ২০১৮ সালে চুক্তি নবায়ন করেছিলাম, কিন্তু এর প্রতিদান পাইনি, যা দুঃখজনক”।

তখনই আর্সেনালে ওজিলের সময় কার্যত ফুরিয়ে আসছিল।