কক্সবাজারে গণধর্ষণ : যা জানা গেল জবানবন্দিতে | Mass rape in Cox’s Bazar: which was known in the deposition

0
152

AVvXsEjZZJTNs5v5hDWf4D7NdhUixFyVRon52DcffvQdf8tb8QBs1C9jETiJVd GstZwtpFTa593cJcMG7mZUHIpFNqJacdrnBibkJBkIwg2fqQ5kqitA8jO8sgNyKs9W7Qeco EJSBa7ceUUMUpLDh VuofUnsNiJvri1F1iU GUsdq3FcBlh RlUz4K3Mu=s16000

কক্সবাজারে গণধর্ষণের ঘটনার রহস্য যেন একটু একটু করে খোলাসা হতে চলেছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী এই বিষয়ে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আদালতে ১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো- ওই নারী তার আট মাস বয়সী অসুস্থ শিশুর চিকিৎসায় অর্থ যোগাড় করতে কক্সবাজারে এসেছিলেন। স্বামীসহ তিন মাস ধরে এখানকার বিভিন্ন হোটেলে থাকেন তিনি।

জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তার ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা যোগাড় করতে তিনি কক্সবাজার এসেছেন। বিগত তিন মাস ধরে শহরের অন্তত ৭টি হোটেলে অবস্থান করেছেন বলেও জানান ওই নারী।

তার ভাষ্যে মতে, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কলাতলী এলাকায় সি ল্যান্ড নামে একটি গেস্ট হাউজে অভিযুক্ত আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। আশিক তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এর আগে তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আরো টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউজ এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী আশিক।

জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে উঠেন আশিক। সেখানে তাকে ধর্ষণের সুযোগ পায়নি সন্ত্রাসী আশিক। তার আগেই একটি ফোন কলের কারণে আশিক কক্ষ থেকে চলে যায়।

ওই নারী জানান, তিনি নিজেই হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে স্বামীকে দেখতে পান র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র‌্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে, কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন।

এরপর তাকে নেয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করেন।

কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার মো: জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও ভিকটিম এবং মামলার বাদীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি ওই নারী ও তার স্বামী গত তিন মাসে ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে লাইট হাউজ এলাকার আরমান কটেজ, একই এলাকার দারুল আল এহসান, সি ল্যান্ডসহ কয়েকটি কটেজে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ওই নারী ও তার স্বামীর দেয়া তথ্যে অনেক গড়মিল রয়েছে। যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নারী ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছে।

এদিকে আরমান কটেজের ম্যানেজার মো: হাসান বলেন, কিশোরগঞ্জ সদরের পরিচয় দিয়ে ওই নারী ও তার স্বামী দৈনিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় আমাদের কটেজে অনেক দিন ছিলেন। বেশিরভাগ সময় বাচ্চা নিয়ে হোটেলে থাকতো ওই নারীর স্বামী। আর ওই নারী বাইরে যেতো। তবে কোথায় যেতো, কী করতো আমরা জানি না।

গত ২০ ডিসেম্বর ওই দম্পতি আরমান কটেজের বিপরীতে দারুল এহছান নামে একটি কটেজে উঠেন। পরের দিন তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে হোটেল মালিক আলি আকবর বলেন, ২০ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে হোটেলের সামনে আশিকের সাথে ওই নারীর স্বামীর কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি ওই নারীর স্বামীর কাছে জানতে চাই কী সমস্যা। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এই কারণে আমি তাদেরকে আমার হোটেল থেকে বের করে দেই। সেখানে থেকে তারা একটু দূরে অন্য একটি কটেজ সি ল্যান্ড হোটেলে উঠেন। সেখানেই ছিলেন ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পুলিশ জানিয়েছে, রাতে ওই হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যায় আশিক। এরপর সেখান থেকে তাকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে ছেনুয়ারা নামে এক নারীর ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী আশিক।

চায়ের দোকানের মালিক ছেনুয়ারা বেগম বলেন, আশিক এক নারীকে সাথে নিয়ে বুধবার রাত ৮টার দিকে আমার এখানে আসেন। এরপর আশিক ওই নারীকে দিয়ে তার স্বামীকে ফোন করান। সেসময় ওই নারী তার স্বামীকে মুঠোফোনে বলেন ‘তুমি নাকি আশিক ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করেছো। তুমি এখানে আসো, আমি আছি। আশিক ভাই তোমাকে কিছু করবে না।’ ওই নারীর স্বামী সেখানে আসেনি। এরপর আশিক কিছুক্ষণ এখানে অবস্থান করেন। পরে ওই নারীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যায়।

তিনি আরো বলেন, সেদিন আশিক আমার দোকানের একটু দূরে এক কিশোরকে ছুরির ভয় দেখিয়ে টাকা লুট করে।

এ বিষয়ে ভিকটিম নারী বলেন, আশিক সেখানে ধর্ষণ না করলেও তার দুই বন্ধু দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। পরে হোটেল মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে আসে আশিক।

জিয়া গেস্ট ইন এর পরিচালক রায়হান বলেন, আশিক ও ওই নারী স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে স্বাভাবিক পর্যটকের মতো হোটেলে আসে। এখানে ওই নারী নিজেকে সাথী নাম পরিচয় দিয়ে কার্ডে স্বাক্ষর করে আশিকের সাথে রুমে গেছেন। তারা একটি কক্ষে ৪০ মিনিট অবস্থান করে। তারপর আশিক বেরিয়ে যায়। এরপর ওই নারীও এখান থেকে চলে যায়। এর অনেক পরে ওই নারী ও তার স্বামীকে নিয়ে আমার হোটেলে আসেন। এখানকার ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিনকে র‌্যাব আটক করে নিয়ে যায়।

৯৯৯-এ কল করেনি ভিকটিম
ভিকটিম ৯৯৯-এ সাহায্য চেয়ে কল করার কথাটি মিথ্যাচার বলছেন কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মহিউদ্দিন বলেন, এই দম্পতি বুধবারের ঘটনার পর ৯৯৯-এ কোনো কল করেনি। তবে দুই মাস আগে ৯৯৯-এ কল করে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। ওই সময়ে থানায় গিয়ে তারা শহরের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ফাহিম ও বাবুর নামে অভিযোগ দিয়েছিলেন। যার তদন্ত করেছিলেন একজন এসআই। তবে পরে ওই নারীর অসহযোগিতার কারণে তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এদিকে ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মূলহোতা আশিক ও তার সহযোগীরা। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here