জিরা গুড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: (Cuminum cyminum), জীরা বা কথ্যভাষায় জিরে হলো অ্যাপিয়াসি গোত্রের একটি পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি। এর বীজ ফলের ভেতরে থাকে। বিভিন্ন দেশে জিরার ফল শুকিয়ে গোটা অথবা গুঁড়ো মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বহু পূর্ব থেকেই জিরা চিরাচরিত চিকিৎসাব্যবস্থার একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এর নিরাপত্তা বা কার্যকারিতার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
জিরা গুড়ার বর্ণনা
জিরার বীজ, প্রায় ৫ মি.মি.
জিরা হলো পার্সলে গোত্রের বিরুৎজাতীয় কিউমিনাম সাইমিনাম উদ্ভিদের শুকনো বীজ৷ জিরা হাত দিয়ে চাষ করতে হয়। এরা প্রায় ৩০–৫০ সেমি (১২–২০ ইঞ্চি) লম্বা হয়ে থাকে। জিরা গাছ একবর্ষজীবী বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ। এদের কাণ্ড সরু, রোমহীন ও শাখান্বিত এবং ২০–৩০ সেমি (৮–১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা ও ৩–৫ সে.মি. (১+১⁄৪–২ ইঞ্চি) ব্যাসবিশিষ্ট হয়ে থাকে। প্রতিটি শাখায় দুই থেকে তিনটি উপশাখা থাকে।
প্রতিটি শাখা প্রায় সমান উচ্চতা লাভ করে এবং এজন্য এদের পত্রাচ্ছাদন সুষম হয়ে থাকে। কাণ্ডের রং ধূসর থেকে কালচে সবুজ হয়। এদের পাতা ৫–১০ সেমি (২–৪ ইঞ্চি) লম্বা, পিনেট অথবা বাইপিনেট এবং উপপত্র সূচিবৎ। এদের সাদা বা গোলাপি রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল পুষ্পছত্রে বিন্যস্ত থাকে। প্রতি পুষ্পছত্রে পাঁচ থেকে সাতটি পুষ্প থাকে। এদের ফল পার্শ্বীয়ভাবে ফিউজিফর্ম বা ডিম্বাকার অ্যাকিন। ফলগুলো ৪–৫ মি.মি. (১⁄৬–১⁄৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়। এরা দ্বিগর্ভপত্রী; এদের প্রতিটি গর্ভপত্রে একটি করে বীজ থাকে।
জিরার বীজে তৈলনালি-সহ আটটি খাঁজ থাকে। জিরার বীজ দেখতে অনেকটা কারোয়ার মতো— গোলাকার লম্বাটে গঠন, আড়াআড়ি খাঁজ এবং হলুদাভ-বাদামি রঙে অ্যাপিয়াসি (আম্বেলিফেরি) গোত্রের অন্যান্য উদ্ভিদের (যেমন: কারোয়া, পার্সলে ও সোয়া বা সালফা প্রভৃতির) সাদৃশ্য লক্ষণীয়।
জিরা গুড়ার ইতিহাস
জিরা খুব সম্ভবত পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের লেভান্তে উৎপত্তি লাভ করেছিল।প্রায় সহস্রাধিক বছর ধরে জিরা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সিরিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের জিরার বীজ পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরের নব্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানেও জিরার নমুনা পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় জিরা মশলা হিসেবে এবং মমীকরণের সংরক্ষক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
প্রাচীন ক্রিটের মিনোয়ান সভ্যতায় জিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মশলা হিসেবে বিবেচিত হতো। মিনোয়ান সভ্যতার শেষ যুগে বিভিন্ন প্রাসাদে জমাকৃত বস্তুর আর্কাইভে লিনিয়ার এ চিত্রলিপিতে লিখিত জিরার বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা খাওয়ার সময় টেবিলে একটি কৌটায় জিরা রাখত (বর্তমান যুগে গোলমরিচ রাখার মতো)। এই প্রথা আধুনিক মরক্কোতে অদ্যাবধি চলিত আছে। প্রাচীন রোমান সভ্যতাতেও জিরার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েক হাজার বছর ধরে রান্নার উপকরণ হিসেবে জিরার ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া উপমহাদেশের রান্নায় ব্যবহৃত বিশেষ মশলার মিশেলেও জিরার ব্যবহার লক্ষণীয়।
স্প্যানীয় ও পর্তুগিজ ঔপনিবেশিকদের মাধ্যমে আমেরিকা অঞ্চলে জিরা পরিচিতি লাভ করে। পারস্য রন্ধনশৈলীতে কালো ও সবুজ জিরা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আবাদকৃত জিরার সিংহভাগ চাষ হয় ভারতীয় উপমহাদেশ, উত্তর আফ্রিকা, মেক্সিকো, চিলি ও চীনে। এছাড়াও, পাখির খাদ্য হিসেবে জিরা ব্যবহৃত হওয়ায় বিভিন্ন দেশে এটি রপ্তানি করা হয়। ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযোজিত উদ্ভিদ হিসেবে জিরার আবাদ হতে দেখা যায়।
মশলা হলো তরকারির প্রাণ। নানান রকমের মশলায় খাবার হয় সুস্বাদু। তেমনি এক মশলা হলো জিরা। জিরার গুঁড়ো শুধু যে তরকারির স্বাদ বাড়ায় তা নয়। এটি খাবারে সুঘ্রাণ আনে। তবে কেল সুস্বাদু ও সুঘ্রাণের জন্য নয়, জিরা আপনি খেতে চাইবেন এর স্বাস্থগত উপকারের দিকগুলো জানলে। কী আছে জিরায়? তা বলছে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট।
• এক গবেষণায় দেখা গেছে গেছে, জিরা দেহের অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের (চর্বি) পরিমাণ ঝরিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে।
• জিরাতে রয়েছে এমন তেল, যা আমাদের খাবারের পরিপাকতন্ত্র ঠিক রেখে হজমে সহায়তা করে।যদি খাবারের হজম শক্তিতে কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে অন্তত একবার জিরা গুঁড়ো বা এক গ্লাস জিরা পানি খেয়ে দেখবেন। এটি হজমশক্তি ঠিক রাখার জন্য উত্তম। তাছাড়া ওজন কমানোর জন্য জিরা পানি আর কলা একসঙ্গে খেতে পারেন, যা আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে।
• এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চা চামচ জিরা সেদ্ধ করে নিন। যখন এটা বাদামী রঙ ধারণ করবে নামিয়ে ফেলুন। ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন তিনবার করে খান। এটি ওজন কমানোর সহায়ক এবং অধিক কার্যকর।
• দুই টেবিল চামচ জিরা রাতের বেলা ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তা পানিতে সিদ্ধ করে সকালের চা’র পরিবর্তে পান করুন এবং জিরা ফেলে না দিয়ে চিবিয়ে নিন। এটা আপনার শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি নিয়মিত পানে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে থাকবে।
• তিন গ্রাম জিরার গুঁড়োর সঙ্গে কিছু পরিমাণ মধু নিয়ে পানি মিশিয়ে একটি পানীয় তৈরি করুন। প্রতিদিন তা পান করুন।
• খাবারে ও স্যুপে জিরার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এটি শুধু খাবারের সুঘ্রাণই বাড়ায় না, মজাদারও করে। পাশাপাশি সহজ উপায়ে ওজন কমানোয় সহায়ক হবে।
• খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন রাতে জিরা খেয়ে ঘুমান।
• জিরা দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে, যেটা শরীরকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ শরীরের অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়াকে কমাতে সাহায্য করে এবং কোষকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
উপরোক্ত উপায় মানার ফলে নিজেই লক্ষ্য করবেন যে, আপনার দেহের ফ্যাট কমে এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে দিয়ে তা কিভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কালো জিরা ক্যান্সার রোধে সহায়ক হিসেবে দেহে কাজ করে থাকে। এছাড়া, শ্বাসকষ্ট, হার্টে সমস্যা, চোখে সমস্যাসহ দেহের নানান জটিলতার সমাধান হিসেবে জিরা দারুণ উপকারী। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্যই নিয়মিত জিরা খান।
মশলা হিসেবে জিরা সুপরিচিত। রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে জিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জিরার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। সুগন্ধি এই মশলাটি আমাদের নানা অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই-
জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। আয়রন শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি মাধ্যমে সেলুলার স্তরে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে।
জিরা পাচনতন্ত্রের জন্য খুবি উপকারী। বদহজম, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা প্রভৃতি রোগ উপসমে জিরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জিরা বমি বমি ভাব দূর করে। জিরা পাকস্থলির এসিড উৎপাদন করে খাদ্য থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টি লাভে সহায়তা করে।
গবেষণায় পাওয়া গেছে জিরাতে আছে শক্তিশালী ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এটা পেট ও লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রাখতে পারে। জিরাতে বিদ্যমান এন্টি-ফ্রির্যা ডিকেলস উপাদান ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করে।
লাল লাল ফুসকুড়ি, ব্রণ ইত্যাদি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়ার জন্য হয়। বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বের হয়ে গেলে ত্বকের উপর এর প্রভাব কমে আসে। জিরা পাচনতন্ত্রের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে ত্বকের সুরক্ষাও দিয়ে থাকে।
জিরা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিয়ে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। এতে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে পারে। ফলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমন থেকে শরীর পায় সুরক্ষা।
এছাড়াও দুর্বল স্মৃতি, পোকামাকড়ের কামড় ও কাঁটা ফোটা বেদনার চিকিত্সায় জিরা উপকারী। তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্যে কিছু জিরা যোগ করুন।
So,আজকে এই পর্যন্ত । আশা করি ”জিরা ” নিয়ে লেখাটি আপনার ভালো লাগেছে ।
আপনি যদি 100% ভেজাল মুক্ত জিরা গুঁড়া নিতে চান,তাহলে সারা দেশে হলি ফুড্স ভালো মানের পণ্য বিক্রয় করে । আপনারা নিরভয়ে যাবতীয় মসলা নিতে পারেন ।