তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৮,০০০ ছাড়িয়েছে, ক্ষীণ হয়ে আসছে জীবিত উদ্ধারের আশা

0
32
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৮,০০০ ছাড়িয়েছে, ক্ষীণ হয়ে আসছে জীবিত উদ্ধারের আশা

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দক্ষিণ তুরস্কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কিছু জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানে দায়িত্বরত তিনটি উদ্ধারকারী দল।

ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে, যদিও গত কয়েকদিনে অলৌকিকভাবে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু জীবিত অবস্থায় আরো অনেককে উদ্ধারের আশা ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে আসছে।

এদিকে, অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে শনিবার জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি অভিযান স্থগিত করেছে।

একজন উদ্ধারকারী বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

তবে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যাতুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কেউ আইন ভঙ্গ করলে তিনি জরুরী ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্ধারকাজে নানা বিপত্তি

অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র শনিবার ভোরে জানিয়েছেন, হাতায় প্রদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ায় অস্ট্রিয়ান ফোর্সেস ডিজাস্টার রিলিফ ইউনিটের বেশ কয়েকজন কর্মী অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে একটি বেস ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “তুরস্কে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে আগ্রাসন বাড়ছে।”

অস্ট্রিয়া উদ্ধার প্রচেষ্টা স্থগিত করার কয়েক ঘণ্টা পরে, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তুর্কি সেনাবাহিনী সুরক্ষা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যেন উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু করা যায়।

সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ গ্রুপ আইএসএআর এবং জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফের (টিএসডব্লিউ) জার্মান শাখাও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে অভিযান স্থগিত করেছে।

আইএসএআর-এর মুখপাত্র স্টেফান হাইন বলেন, “বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে, গুলিও চালানো হয়েছে।”

আইএসএআর-এর অপারেশন ম্যানেজার স্টিভেন বেয়ার বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন যে খাদ্য, পানি সেইসাথে মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ” আমরা নিরাপত্তা পরিস্থিতির খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি।”

তুর্কি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিরাপদ করে তোলার সাথে সাথেই জার্মান উদ্ধারকারী দলগুলো আবার কাজ শুরু করবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে।

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফুয়াত ওকতে শনিবার ঘোষণা করেছেন যে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ হাজার ৬১৭ জন হয়েছে।

যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, রেচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান হাতায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি, তিনি শনিবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে সরকার এই অঞ্চলে অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

“আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি,” মিঃ এরদোয়ান দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “এর মানে হচ্ছে, যারা লুটপাট বা অপহরণের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবে।”

এএফপি জানিয়েছে, লুটপাটের অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নগদ অর্থ, গহনা এবং ব্যাংক কার্ডসহ বেশ কয়েকটি বন্দুক জব্দ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে।

আন্তাকিয়ায় একটি ধসে পড়া ভবনে সহকর্মীকে খুঁজছিলেন ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, তিনি রয়টার্সকে বলেছেন: “লোকজন দোকান এবং গাড়ির জানালা ও বেড়া ভেঙে ফেলছে।”

গাজিয়েনটেপ ও সানলিউরফা প্রদেশে ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় তুর্কি পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। আটককৃতদের মধ্যে ভবনের ঠিকাদাররা রয়েছেন, ডিএইচএ নিউজ এজেন্সি এমন খবর প্রকাশ করেছে।

তুরস্কে কমপক্ষে ৬০০০টি ভবন ধসে পড়েছে।ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা

বড় আকারের ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত কিনা এবং প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সরকার জীবন বাঁচাতে আরও কিছু করতে পারত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা এই নেতার ভবিষ্যৎ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে এবং তার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানও উপেক্ষিত হয়েছে।

মি. এরদোয়ান ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু ভুল হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি একটি দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনের সময় এই ভূমিকম্পের পেছনে ভাগ্যকে দোষারোপ করে বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সবসময় ঘটেছে। এটি নিয়তির অংশ।”

ধ্বংসস্তূপের নিচে ১০০ ঘণ্টা পর অলৌকিক উদ্ধার


শনিবার যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচজনের একটি পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এপি নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বাবা-মা, দুই মেয়ে ও ছেলেকে তাদের ধসে পড়া বাড়ির নিচ থেকে পাঁচ দিন পর নিরাপদে তুলে আনা হয়েছে, এসময় তারা “ঈশ্বর মহান” বলে কাঁদতে থাকেন।

সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে যে হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে প্রায় ১৩২ ঘণ্টা পরে সাত বছর বয়সী একটি মেয়েকেও টেনে আনা হয়েছে।

বিবিসি বুধবার থেকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আনতাকিয়ায় দুই বোনের অসাধারণ উদ্ধারের ফুটেজও প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের এইড চিফ এই ভূমিকম্পের ঘটনাকে “ওই অঞ্চলে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যয়কর ঘটনা” হিসাবে বর্ণনা করেছেন, তিনি শনিবার তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে ছিলেন।

মার্টিন গ্রিফিথস তুরস্কে বিবিসির লিজ ডুসেটকে বলেছেন, “আমি মনে করি এটি আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও অসাধারণ।”

“শতাধিক দেশ এখানে তাদের লোক পাঠিয়েছে, বলা যায় অবিশ্বাস্য সাড়া পাওয়া গিয়েছে যা এখানে খুব প্রয়োজন।” তিনি যোগ করেছেন।

মি. গ্রিফিথস দেশটির এমন বিপর্যয়ের সময় আঞ্চলিক রাজনীতিকে একপাশে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন – এই ঘটনায় রাজনীতি মিশে যাওয়ার কিছু আলামত পাওয়া যাওয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

দীর্ঘ সময়ের বিরোধপূর্ণ আর্মেনিয়া-তুরস্ক সীমান্ত শনিবার পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।

পয়ত্রিশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই সীমান্ত দিয়ে সাহায্যের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এবং এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে যে সিরিয়ার সরকার বিরোধী দলগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোয় জাতিসংঘের সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে, যাদের সাথে তারা ২০১১ সাল থেকে একটি তিক্ত গৃহযুদ্ধে জড়িত।

তবে সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক তৎপরতা যথেষ্ট দ্রুত নয় বলে সমালোচনা রয়েছে।

সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের ইসমাইল আল আবদুল্লাহ, বা হোয়াইট হেলমেট, যা বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করছে তারা বিবিসি-র কুয়েন্টিন সোমারভিলকে বলেছেন যে সংস্থাটি জীবিতদের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের “হাত রক্তে রাঙানো”। “আমাদের উদ্ধার সরঞ্জাম দরকার ছিল যা কখনো আসেনি।”

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর সিরিয়া প্রতিনিধি শিভাঙ্কা ধানপালা আলজাজিরাকে বলেছেন যে ভূমিকম্পের পরে প্রায় ৫৩ লাখ সিরিয়ান গৃহহীন হতে পারেন।

“এটি একটি বিশাল সংখ্যা যেখানে কিনা আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত” তিনি বলেন।