দাদারুচিনি গুড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

0
36
দাদারুচিনি গুড়া

দারুচিনি গুড়া, (ইংরেজি নাম: Cinnamon) (বৈজ্ঞানিক নাম: (Cinnamomus Zeylanicum) একটি মসলা বৃক্ষের নাম। স্বাভাবিক পরিবেশে এই বৃক্ষের উচ্চতা দশ থেকে পনের মিটার পর্য্যন্ত হয়ে থাকে। আদি নিবাস শ্রীলংকায়। আজ কাল ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও চীন প্রভৃতি দেশে ও উৎপাদিত হচ্ছে। দেখতে কিছুটা তেজপাতা বৃক্ষের মতো এই বৃক্ষের চামড়াটা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দারুচিনির সুগন্ধ যুক্ত তৈল ও পাওয়া যায়।

দারুচিনি একটা সুগন্ধযুক্ত মশলা হিসাবে প্রায় প্রতিটা রান্নাঘরে দেখতে পাওয়া যায়। দারুচিনির জোরালো সুগন্ধ এবং স্বাদ একে মিষ্টি এবং মশলাদার বিনোদনের একটা খাঁটি ফোড়ন হিসাবে উপস্থিত করে। কিন্তু এই মশলা শুধুমাত্র রান্নাঘরের আলমারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আয়ুর্বেদীয় এবং ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন-এ (TMC) বহুদিন যাবত দারুচিনি এর নিরাময় করার উপযোগিতার জন্য উঁচুদরের মান্যতা পেয়ে আসছে। পরম্পতাগত পশ্চিমী ঔষধ পদ্ধতিও এই মশলাকে উচ্চস্তরের মান্যতা দেয়। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলি অনুযায়ী, লবঙ্গের পরেই দারুচিনি হল সর্বোত্তম অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটা জানতে পেরে আপনাকে আগ্রহী করে তুলতে পারে যে এই মশলার একটা দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। দারুচিনির প্রাচীনতম ব্যবহার প্রায় 2000-2500 BC আগেকার সময়ের। ইহুদী (Jewish) বাইবেলে দারুচিনি একটা প্রলেপ লাগাবার মাধ্যম হিসাবে উল্লিখিত আছে এবং এটা মিশরীয়দের (Egyptians) দ্বারা তাঁদের শবদেহকে মমিতে পরিণত করার কাজেও ব্যবহৃত হ’ত। রোমে, শবদেহের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে দারুচিনি থাকতো। বস্তুত:, রোমে এই মশলা এতোটা উচ্চ মূল্যবান ছিল যে এটা শুধু ধনী ব্যক্তিদের একটা পণ্য হিসাবে থাকতো।

দারুচিনি গুড়া উপকারিতা ও দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম

হজমের সমস্যা, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা, ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ও চর্মরোগ সহ বহু রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় দারুচিনি সেবনে। ডায়রিয়া ও যক্ষার মতো বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগও সেরে উঠে দারুচিনি খাওয়ার মাধ্যমে। তবে অনিয়মিত খেলে তেমন উপকার হয় না, নিয়মিত খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাহলে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম আসলে কি? চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ

ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – দীর্ঘদিন ক্ষুধা কম লাগার ফলে শরীর হালকা হতে শুরু করে। তবে দারুচিনির মিশ্রন খেলে ক্ষুধা বাড়বে, খাবারে রুচি ফিরে আসবে। এক্ষেত্রে 500 মিলিগ্রাম দারুচিনি, 500 মিলিগ্রাম শুঁথি পাউডার ও 500 মিলিগ্রাম এলাচ পিশে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। খাবার আগে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রন সেবন করুন।

হেঁচকি সমস্যায় দারুচিনির উপকারিতা – হঠাৎ হঠাৎ হেঁচকি ওঠা খুবই স্বাভাবিক। তবে সবসময় হেঁচকি ওঠা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আর এমন হেঁচকির সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। তাদের জন্য দারুচিনি হতে পারে একটি আদর্শ ঔষধ। এক্ষেত্রে প্রতিবার ১০-২০ মিলি দারুচিনির ক্লথ পান করতে পারেন । সাথে সাথেই অন্যরকম স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

বমি বন্ধ করতে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – বমি বন্ধ করতে দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী। এক্ষেত্রে দারুচিনি এবং লবঙ্গের একটি মিশ্রন তৈরি করুন। বমি শুরু হলে ১০-২০ মিলি পরিমান মিশ্রন খেয়ে নিন। এতে দ্রুত বমি বন্ধ হবে।

চোখের রোগে দারুচিনির ব্যবহার – দিন দিন মানুষের চোখের সমস্যা বেড়েই চলছে। চোখ টলতে থাকার সমস্যাটি এখন অনেকের। এতে বেশি বেশি চোখের পলক পড়ে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ দারুচিনি তেল চোখের পাতায় লাগান। এতে অতিরিক্ত পলক পড়া বন্ধ হবে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

দাঁতের ব্যথার জন্য দারুচিনির ব্যবহার – আপনি কি দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন? দারুচিনি আপনার দাঁত ব্যথা দূর করতে পারে সহজেই। প্রথমে দারুচিনির তেল সংগ্রহ করুন। তারপর তেলের ভিতর তুলো ভিজিয়ে ব্যাথাযুক্ত দাঁতে মেখে দিন। এতে দাঁত ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে করতেও দারুচিনি অনেক কার্যকরী। ৫-৬ টি দারুচিনির পাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন, দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে হবে।

মাথাব্যথা উপশমে দারুচিনির উপকারিতা – মাথাব্যথা থেকে আরাম পেতে দারুচিনি কাজ করে ম্যাজিকের মতো। দারুচিনির আট-দশটি পাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন। ব্যাথার সময় এই পেস্ট মাথায় লাগান। এতে ঠান্ডা বা গরমে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। তবে মাথাব্যথা কমে গেলে, পেস্টটি অবশ্যই ধুয়ে নিন।

একটু ঠাণ্ডা লাগলেই অনেক সময় মাথা ব্যথা করে। এটি মূলত ঠান্ডা জনিত মাথাব্যথা। এক্ষেত্রে আপনি পরিমাণমতো দারুচিনি তেল নিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। সাথে সাথেই অনেক আরাম পাবেন ইনশাআল্লাহ।

কেউ কেউ ভুগে থাকেন স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায়। এক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ দারুচিনি তেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় উপকার পাবেন।

সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দারুচিনির ব্যবহার – দারুচিনি পিষে পানিতে মেশান, তারপর তা গরম করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট ঠান্ডার জন্য খুবই কার্যকরী। তাছাড়া আপনি যদি দারুচিনি পিষে রস বানান, আর সেই রস মাথায় লাগান, তাতেও সর্দি কাশি অনেকটাই কমে যাবে।

কাশি রোগে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – কাশি অনেক কমন একটি রোগ। তবে সবচেয়ে বেশি কাশি হয় শীতকালে। কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খেতে হবে দারুচিনির গুড়া ও মধুর তৈরি মিশ্রন। আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রনটি তৈরি করে নিন। তারপর নিয়ম করে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার খান, কয়েকদিনেই কাশি থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

দারুচিনি গুড়া প্রকারভেদ – Types of Cinnamon in Bengali

দারুচিনির প্রকারভেদঃ দারুচিনির বেশ কিছু সংখ্যক বৈচিত্র্য রয়েছে কিন্তু দুটো সর্বাধিক পরিচিত ধরণ হলঃ সিলোন দারুচিনিঃ আসল দারুচিনি হিসাবেও পরিচিত। এটা শ্রীলঙ্কায় প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয় এবং অত্যন্ত মূল্যবান। এটার একটা মিষ্টি স্বাদ এবং মৃদু সুগন্ধ আছে। সিলোন দারুচিনি কাগজের পাতলা পরতে পরস্পরের সাথে ডগায় মোড়া একটা ফাঁপা নল গঠন করে এবং অনেক হালকা রঙের দেখতে হয়। ক্যাসিয়া দারুচিনিঃ এর উৎসমূলের জন্য চীনা দারুচিনি হিসাবেও পরিচিত। এটা সর্বাধিক প্রচলিতভাবে ব্যবহৃত দারুচিনির ধরণ। ক্যাসিয়া দারুচিনির রং গাঢ় বাদামী এবং একটা তীব্র সুগন্ধ এবং মশলাদার স্বাদ আছে। এই ধরণের দারুচিনির কাঠিগুলি একদিক অথবা উভয়দিক থেকে মাঝখানে একটা একক পুরু পাতের রোলিং গঠন করে। সিলোন দারুচিনির চেয়ে এতে কুমারিন উপাদান অনেক বেশি পরিমাণ থেকে এবং এজন্য লিভারের পক্ষে উচ্চতর শোষণে বিষাক্ত হয়।

দারুচিনির অপকারিতা

একজন ব্যক্তির জন্য যা উপকারী অন্য ব্যক্তির জন্য তা ক্ষতিকরও হতে পারে। কেও যদি প্রশ্ন করেন যে দারুচিনি আমার জন্য উপকারী নাকি অপকারী? তবে উত্তরে আমি বলবো, হ্যা এবং না। এর উপকারীতা এবং অপকারীতা নির্ভর করে আপনি এটি কি পরিমানে খাচ্ছেন তার উপর। কারন অধিক পরিমাণে খেলে ঘটতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।

  • অধিক পরিমানে দারুচিনি সেবনে মাথা ব্যথা দেখা দেয়।
  • দারুচিনি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলারা দারুচিনির ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকুন।
  • জরায়ুতে দারুচিনি রাখলেও গর্ভধারণ হয়।
  • অতএব, দারুচিনির ক্ষতি এড়াতে, ব্যবহারের আগে সঠিক নিয়ম জেনে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, অধিক দারুচিনি সেবনে অধিক উপকার পাওয়া যায় না।

শীতে দারুচিনি কিভাবে ব্যবহার করবেন?

শীতকালে বেশিরভাগ মানুষের সর্দি-কাশি-ঠান্ডা লেগেই থাকে। তাই এ সময়ে দারুচিনি খাওয়ার কার্যকারীতা সবচেয়ে বেশি। মসলা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহৃত হয় এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আপনি চাইলে শীতকালে এটি ব্যবহার করতে পারেন আয়ুর্বেদ হিসেবে। প্রতিদিন এটি খেতে পারেন ক্বাথ আকারে অথবা চায়ের সাথে। চায়ে দারুচিনি খাওয়ার মজাই আলাদা। এটি যেরকম বৃদ্ধি করবে চায়ের স্বাদ তেমনি আপনাকে রক্ষা করে ঠান্ডা থেকেও। দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা ঠিক কেমন?

দারুচিনি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানব দেহের মেটাবলিজম উন্নত করে দারুচিনি। এতে শারীরিক গঠন স্বাভাবিক থাকে। ফলে দেহের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
দেহের ওজন বাড়তে শুরু করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই কঠিন। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে আপনাকে থাকতে হবে বাড়তি সচেতন। পাশাপাশি খেতে পারেন দারুচিনি গুড়ার ক্বাথ। নিয়মিত খেলে অবশ্যই ভাল ফলাফল পাবেন। তবে ভালো ফলাফল পেতে কখনোই অধিক পরিমানে দারুচিনি খাবেন না।

দারুচিনি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উপকারী?

এতদিনে করুণা সম্পর্কে আমরা জেনে গেছি অনেক অজানা সত্য। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি তার করোনা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা তত কম। এসকল ব্যাপার চিন্তা করেই, ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক সকল মানুষকে (ইমিউনিটি বুস্টার ডিকোকশন) ক্বাথ পান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এই ক্বাথ এর অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে দারুচিনি। এটি যেমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে, তেমনি শীতকালীন ছোটখাটো ভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সীমিত পরিমানে দারুচিনি সেবন করা।

প্রিয় ভিজিটর দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সংক্রান্ত এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি দারুচিনির উপকারিতা সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। দারুচিনির অপকারিতা কিকি এটিও আপনি ভালোভাবে জেনে গেছেন। তাছাড়া সঠিক ভাবে দারিচিচনি দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম জেনে গেছেন। এখন থেকে যেকোনো সময় আপনার প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করুন। ধন্যবাদ।

So,আজকে এই পর্যন্ত । আশা করি ”দারুচিনি ” নিয়ে লেখাটি আপনার ভালো লাগেছে ।
আপনি যদি 100% ভেজাল মুক্ত দারুচিনি গুঁড়া নিতে চান,তাহলে সারা দেশে হলি ফুড্স ভালো মানের পণ্য বিক্রয় করে । আপনারা নিরভয়ে যাবতীয় মসলা নিতে পারেন ।

https://holyfoods.net/holly-hot-spice-powder-jar-100-gm/

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন ।

https://holyfoods.net/