পাঁচ শতাধিক মানুষকে দুবাই পাচার করেছে চক্রটি | The ring has trafficked more than five hundred people to Dubai

0
266

AVvXsEjvRsftNn09WnIZAL7C3d RdwMp zLRCd2OHyAbdIBwoN5JS99E4TsK3jKR6rJkKOu jgoHWdXlDRT2ayN 0hm7IoFMp2EBJi mqA0zJ2ubJa3nc5qTnFESOlBsvspPdui cTXBbRzCtMHcxLOJZNgbx WC43j1cC9J1fCI2Wi0nYuuSw72QXdMv2Vf=s16000

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানবপাচার চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড এবং পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে র‍্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রাণী দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ এ অভিযোগ করেন, একটি চক্র তাদেরকে ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিযোগকারী বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং টাকা ফেরত চান।

র‍্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মানবপাচারকারী এই চক্র তখন নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে তাদের সরবরাহ করে। সেই নকল কার্ড নিয়ে ভুক্তভোগী বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা ভুক্তভোগীদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড নকল হিসেবে শনাক্ত করেন এবং ভুক্তভোগীদের বিদেশ যাত্রা স্থগিত করেন। তখন ভুক্তভোগীরা তাদের সংশ্লিষ্ট দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, একাধিক ভুক্তভোগীর দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন ডিএমপি ঢাকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মো. নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১), মো. নুরে আলম শাহরিয়ার (৩২), রিমন সরকার (২৫), মো. গোলাম মোস্তফা সুমন (৪০), মো. বদরুল ইসলাম (৩৭),  মো. খোরশেদ আলম (২৮),  মো. সোহেল (২৭) এবং মো. হাবিব (৩৯)।

AVvXsEiC9w78SDYX C2Oto0IgTVCZ6DRajPdvW5AB0T6Qm4qHzo 2Z AG5wK gmJB3Rr1E6yfBnBmP0u1wwdkP3gmhg6RFrGTqBbPfavAMCo2AtViK e8gAVrLjQWO3t3YJlMzrhzMZIYy6FJRPtcmtg8Rh7XOtlU4vS1 7jpZrUT5MGjF0uMRQVaP6gE83w=s16000

এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ১৪টি নকল বিএমইটি কার্ড, একটি সিপিইউ, চারটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, দুই বক্স খালি কার্ড, পাঁচটি মোবাইলফোন, একটি চেক বই ও পাঁচটি নকল সিল জব্দ করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, মো. নাইম খান ওরফে লোটাস ওই চক্রের মূল হোতা। তিনি দুবাই প্রবাসী। চলতি বছরের মে মাসে তিনি দেশে ফেরত আসেন। ২০১২ সালে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে দুবাই গমন করেন তিনি। পরবর্তীতে দুবাই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুবাই শ্রম বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের ওয়ার্কপারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়।

বীণা রাণী দাস জানান, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাইম মানবপাচারে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দুবাইয়ে এবং বাংলাদেশে তার পরিচিতজনদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেন। ভুক্তভোগীরা রাজী হলে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি তাদেরকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নিয়ে যান।

ভুক্তভোগীরা ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবে তিনি ৭ বছর ধরে পাঁচ শতাধিক ভুক্তভোগীকে দুবাই পাচার করেছেন। মানবপাচার থেকে অর্জিত অবৈধ উপার্জন দিয়ে তিনি দুবাইয়ে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নিজে রেসিডেন্স ভিসার অনুমোদন নেন।

র‍্যাব জানায়, দুবাইয়ে ফারুক নামে তার একজন সহকারী রয়েছেন এবং মো. নুরে আলম শাহরিয়ার বাংলাদেশে তার মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। শাহরিয়ার ভুক্তভোগীর যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দেন। শাহরিয়ারের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান রয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু ভুক্তভোগী বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে বিএমইটি কার্ড জালিয়াতি চক্র মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত হন।

র‍্যাব জানায়, বিএমইটি কার্ড জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা হাবিব এবং খোরশেদ। তারা দীর্ঘদিন ধরে গোপনে নিজেদের আড়ালে রেখে বিশ্বস্তজনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে নাইম বিএমইটি কার্ড ছাড়াই মানবপাচার করে আসছেন।

জাল বিএমইটি কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে হাবিব জানান, তিনি মহসিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে খালি কার্ড কিনে আনেন। প্রকৃত বিএমইটি কার্ড স্ক্যান করে তিনি নিজেই গ্রাফিক্স তৈরি করেন। তারপর ভুক্তভাগীর পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কার্ডের পেছনে তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় এবং বদরুলের নির্দেশ অনুসারে রিক্রুটিং লাইসেন্সের নম্বর বসিয়ে দিতেন। তিনি চার বছর ধরে ভিজিটিং কার্ড ও আইডি কার্ডের ডিজাইন এবং প্রিন্টের ব্যবসা করে আসছেন।

র‌্যাব আরও জানায়, অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী, অর্থের বিনিময়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নকল কার্ড তৈরি করে সরবরাহ করে আসছেন। আসামিদের নামে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে বলেও র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here