পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া | Australia defeated Pakistan in the final

0
115

rizwan fakhar 111121 01

সীমানায় ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারলেন না হাসান আলি। হয়তো সেই সময়ই লেখা হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। পরের তিন বলে তিন ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দিলেন ম্যাথু ওয়েড! পাকিস্তানের আশা ভেঙে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল অস্ট্রেলিয়া।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৫ উইকেটে জিতেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। পাকিস্তানের ১৭৬ রান তারা ছাড়িয়ে গেছে ৬ বল বাকি থাকতে। 

আগামী রোববার এই মাঠেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে তাসমান সাগর পাড়ের আরেক দেশ নিউ জিল্যান্ডের। প্রথম সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই সংস্করণের বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠে দলটি।

অস্ট্রেলিয়ার জয়ে নিশ্চিত হয়ে গেল নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সফলতম দলটি এর আগে একবারই উঠেছিল ফাইনাল। সেবার সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর পর শিরোপা লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। 

বৃহস্পতিবার শাদাব খানের সেরা বোলিংয়ে একটা সময় চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সম্ভাবনায় এগিয়ে যায় পাকিস্তান। কিন্তু মাত্র ৪১ বলে ৮১ রানের খুনে জুটিতে ব্যবধান গড়ে দিলেন মার্কাস স্টয়নিস ও ওয়েড। শেষ ৫ ওভারে ৬২ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দিলেন কেবল ৪ ওভারেই।   

শেষটা ভীষণ হতাশার হলেও ম্যাচের শুরুটা পাকিস্তানের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে দলকে টানেন বাবর আজম। জ্বরের জন্য আগের দিন অনুশীলন করতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। তার খেলা নিয়েও জেগেছিল শঙ্কা। অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে মাঠে নামলেন, প্রতিপক্ষের ভুলে শূন্য ও ২০ রানে জীবন পেয়ে ব্যাটিংয়ে নেতৃত্বও দিলেন তিনি।

পাওয়ার প্লের প্রতি ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পাকিস্তান ৬ ওভারে তোলে ৪৭ রান। ফিল্ডিং ছড়িয়ে দেওয়ার পর কিছুটা ভাটা পড়ে রানের গতিতে। অ্যাডাম জ্যাম্পাকে ছক্কা মেরে চাপ কাটাতে চেয়েছিলেন বাবর। টাইমিং করতে পারেননি, পাকিস্তান অধিনায়ক ধরা পড়েন লং অনে। ভাঙে ১০ ওভার স্থায়ী ৭১ রানের জুটি।

AVvXsEge05Lou9HG8T8wBpUlMe2sslWPIBsNrNgg7MzfpGwKK3FXPZPMToKSbTyF qtkIDDg04wf0rI KcaNuseJkPPFr4eEw EYfxeNoeWq1ti1tYtXk5qzyptbZ5vYxQ9J2yMrVQ5ofnD 8JmZLM8E7zXrJnFLckLbwIc4e22e lLmF VcZygwk prhDl=s16000


টাইমিং পেতে ভুগছিলেন রিজওয়ান। এর মধ্যেও কয়েকটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। দ্বাদশ ওভারে স্লগ করে ছক্কায় প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হাজার রানের মাইলফলক।

৪১ বলে ফিফটি করার পর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মন দেন রিজওয়ান। শুরুতে একটু সময় নেওয়া ফখরও চড়াও হন বোলারদের ওপর। সপ্তদশ ওভারে তাদের দুই ছক্কা ও এক চারে আসে ২১ রান।

পরের ওভারে রিজওয়ানকে বিদায় করে ৪৬ বল স্থায়ী ৭২ রানের জুটি ভাঙেন মিচেল স্টার্ক। ৫২ বলে চার ছক্কা ও তিন চারে ৬৭ রান করেন রিজওয়ান।

আসিফ আলি ও শোয়েব মালিক করতে পারেননি তেমন কিছু। দলকে ১৭৬ পর্যন্ত নিয়ে যান ফখর। ৩২ বলে তিন চার ও চার ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে।

চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ইনিংসের তৃতীয় বলে অ্যারন ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউ করে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। সেই ওভারেই আম্পায়ার্স কলে কোনোমতে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন মিচেল মার্শ।

শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কায় প্রথম তিন ওভারে আসেনি তেমন রান। চতুর্থ ওভারে ইমাদ ওয়াসিমকে ছক্কার পর দুই চার মারেন ডেভিড ওয়ার্নার। হারিস রউফের পরের ওভারে ছক্কা ও চার মারেন মার্শ। প্রথম ৩ ওভারে ১৩ রান করার পরও পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৫২ রান।

আক্রমণে এসেই দ্রুত এগোনো জুটি ভাঙেন শাদাব। স্লগ সুইপে লেগ স্পিনারকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে থামেন মার্শ। ২২ বলে তিনি তিনি ফিরেন ২৮ রান করে। ভাঙে ৩৬ বল স্থায়ী ৫১ রানের জুটি।

পরের দুই ওভারে স্টিভেন স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দ্রুত বিদায় করেন শাদাব। নিজের শেষ ওভারে থামান ওয়ার্নারকেও। লেগ স্পিনারের বলে কাভার ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ঠিক মতো পারেননি। কিপারের গ্লাভসে বল জমা পড়লে জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। যদিও আল্ট্রা এজে দেখা গেছে, বল স্পর্শ করেনি ব্যাট। রিভিউ নিলে টিকে যেতেন ওয়ার্নার।

তার বিদায়ে ম্যাচ হেলে পড়ে পাকিস্তানের দিকে। কিন্তু স্টয়নিস ও ওয়েডের জুটি যেন প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নেয় জয়। হাসান ও হারিস রউফদের ওপর চড়াও হয়ে রানের গতিতে দম দেন তারা।

australia 111121 03

জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২২ রান। ১৯তম ওভারে বোলিং এসে সুযোগ তৈরিও করেছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু তাড়াহুড়া করে হাসান মুঠোয় জমাতে পারেননি ক্যাচ। ওভারের শেষ তিন বলে তিন ছক্কা মেরে কিপার-ব্যাটসম্যান ওয়েড দলকে নিয়ে যান ফাইনালে।

১৭ বলে চার ছক্কা ও দুই চারে ৪১ রানের খুনে ইনিংসের জন্য বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ওয়েড জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দুটি করে ছক্কা ও চারে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন স্টয়নিস।

২৬ রানে ৪ উইকেট নেন শাদাব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে এই প্রথম চার উইকেট পেলেন কোনো বোলার।   

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৬/৫ (রিজওয়ান ৬৭, বাবর ৩৯, ফখর ৫৫*, আসিফ ০, মালিক ১, হাফিজ ১; স্টার্ক ৪-০-৩৮-২, হেইজেলউড ৪-০-৪৯-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২০-০, কামিন্স ৪-০-০-১, জ্যাম্পা ৪-০-২২-১, মার্শ ১-০-১১-০)

অস্ট্রেলিয়া: ১৯ ওভারে ১৭৭/৫ (ওয়ার্নার ৪৯, ফিঞ্চ ০, মার্শ ২৮, স্মিথ ৫, ম্যাক্সওয়েল ৭, স্টয়নিস ৪০*, ওয়েড ৪১*; আফ্রিদি ৪-০-৩৫-১, ইমাদ ৩-০-২৫-০, রউফ ৩-০-৩২-০, হাসান ৪-০-৪৪-০, শাদাব ৪-০-২৬-৪, হাফিজ ১-০-১৩-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ম্যাথু ওয়েড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here