ফরিদপুরে তিন বন্ধুর ইতালি যাত্রা : পথে দুই জনের মৃত্যু

0
298

 তিন বন্ধুর ইতালি যাত্রা : পথে দুই জনের মৃত্যু
Three friends travel to Italy: Two killed on the way

AVvXsEhSydKNz8K0f0qCaPqok0aJ 5q08F4vVrBouJ33ceg5SITeLh R8zZ5ISMmOUn4ncIl6kk1dtCGxsM3WGqaDDuDoAN0FbUznZ7RfsbOQKqovkvXF Qao0TARSInsMOdRH8oZeফরিদপুরের নগরকান্দার কাইচাইল গ্রামের তিন বন্ধুর ইতালি যেতে পাশের গ্রামের দুই প্রবাসী দালালের সঙ্গে চুক্তি হয় ৩০ লাখ টাকায়। দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদের হাতে তুলেও দেন ২৪ লাখ টাকা। লিবিয়ায় একটি ঘরে বন্দি হন তিন বন্ধু। পরে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় দুই বন্ধুর। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দার কাইচাইল গ্রামের ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (২১)। তিন বন্ধুর মধ্যে সামিউল একাই মায়ের কোলে বেঁচে ফিরেছেন। নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া দুই বন্ধু হলেন, বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতুব্বরের ছেলে ফয়সাল মাতুব্বর (১৯) ও মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২২)।

মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরা সামিউল দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। বড় ভাই শাহিন শেখ (২৮)। বড় বোনের (২৬) বিয়ে হয় ছয় বছর আগে। ছোট বোন (১৪) নগরকান্দার একটি মাদ্রাসায় পড়ে। সামিউল সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বিদেশে যাওয়ায় তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

সেদিনের সেই রোমহর্ষ বর্ণনা দিয়েছেন সামিউল শেখ। 

সামিউল শেখ জানান, গত বছরের ১৪ নভেম্বর আমরা তিন বন্ধু ইতালি যেতে প্রথমে ঢাকায় যাই। ঢাকার কাকরাইলে আল-হেলাল বোর্ডিংয়ে তিন দিন থাকি। সেখান থেকে ১৭ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ে যাই। সেখানে দালাল শওকতের ভাই জুয়েল মাতুব্বরের কাছে পৌঁছাই ১৮ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর বিমানে লিবিয়ায় পৌঁছাই। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যেতে স্পিডবোটে ২৭ জানুয়ারি রওনা দেই। এরপর ইতালি যেতে প্রথমে আমাদে জাহাজে তোলার জন্য লিবিয়ার জোয়ারা ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমাদের সঙ্গে ছিলেন অলিদ নামের এক দালাল। ঘাটে নিয়ে তাদের জাহাজের পরিবর্তে ২০ জন ধারণক্ষমতার একটি স্পিডবোটে অস্ত্রের মুখে জোর করে তোলা হয়। স্পিডবোটে ২ জন চালকসহ মোট ৩৭ জনকে তোলা হয়। প্রায় আট ঘণ্টা চলার পর হঠাৎ ঝোড়ো বাতাসে মাঝারি আকারের স্পিডবোটটি উল্টে যায়। সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে চালক ও আমার এক বন্ধু ফয়সাল মাতুব্বরসহ ২৯ জন ভেসে যান। আটজনের মধ্যে আমি ও আরেক বন্ধু নাজমুল স্পিডবোটের একপাশ ধরে থাকি। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর আমার এক বন্ধু নাজমুল ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায়। এরপর আমরা সাতজন বোটের অন্য পাশে ভাসতে ভাসতে তিউনিসিয়া সীমান্তে চলে যাই। তখন আমাদের শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। এভাবে প্রায় ১১ ঘণ্টা ভাসতে থাকি। এরপর কিছু দূরে একটি জাহাজ দেখে আমাদের মধ্যে ফারুক নামের একজন একটি লাল গেঞ্জি উঁচু করেন। জাহাজটির লোকেরা আমাদের দেখতে পেয়ে তিউনিসিয়া সীমান্ত থেকে উদ্ধার করেন। জাহাজে তুলে তাঁরা আমাদের নির্যাতন শুরু করেন। লাথি মারতে থাকেন। এসময় জাহাজে আরেক সহযাত্রী রাশেদুল নামের একজন মারা যান। ২ জন বোট চালকসহ মোট ৩৭ জনের মধ্যে বেঁচে ফেরেন মাত্র ৬ জন। জীবিতরা হলেন, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের ইউসুফ মৃধা, একই জেলার নালিখা গ্রামের ইয়াসিন, বেলাব থানার ফারুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাকির, মাদারীপুরের ইউনুস ও নগরকান্দার সামিউল শেখ।

AVvXsEiCBhIkqivWGjePVBXl1zAD1YwRlOL WXWDHPjaMs57Z ZFi BL02DpOWli3x4DlzTT9O523F1wbm5Vmnm7ywpclyyZCo3AtTjsnQG3d804 BJT80Io9u9zT2zReSiPflসামিউল শেখ বলেন, ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছয়জনকে লিবিয়ার জাউইয়া ঘাটে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জাউইয়া জেলে। সেখানে তিন দিন (৩১ জানুয়ারি) পর্যন্ত থাকি। পরে খামছাখামছিন জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বন্দী থাকতে হয় ১ মাস ২৮ দিন। জেলে সকাল এগারোটার দিকে ১০০ গ্রামের একটা রুটি এবং রাত এগারোটায় আরেকটি রুটি দেওয়া হতো। ওখানে রুটি নাম খুবজু। খুবজুর সাথে প্রতিদিন দুই বেলা পানির বোতলের ছিপি মেপে ২ থেকে ৩ ছিপি পরিমাণ পানি খেতে দেওয়া হতো।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) থেকে যোগাযোগ করা হয়। আইওএম আমাদের দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করে এবং ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আসার পর বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে ৪ হাজার ৭৮০ টাকা দেয়। আমরা ২ মার্চ ঢাকায় ফিরে আসি। এক সপ্তাহ বিমানবন্দরের পাশে হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিন থাকার পর ১০ মার্চ বাড়িতে ফিরে আসি।

দালাল রাসেল ও শওকত মাতুব্বর লিবিয়ায় অবস্থানকারী নরসিংদীর দালাল মনির শীলের কাছে আমাদের বিক্রি করে দেন। পরে মনির শীল লিবিয়ার দালাল অলিদের কাছে বিক্রি করে দেন।

মৃত্যুর মুখ থেকে দেশে ফিরে আসা সামিউল শেখ অভিযোগ করে আরও বলেন, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ির সঙ্গে জড়িত দালাল চক্রের মধ্যে দেশে আছেন দুজন। আর লিবিয়ায় দুজন। দেশের দুই দালাল হলেন নগরকান্দার কাইচাইল ইউনিয়নের ছোট নাওডুবি গ্রামের হান্নান মাতুব্বরের ছেলে শাহিন মাতুব্বর (৪১) ও মৃত শামসুদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে ইলিয়াস মাতুব্বর (৩৯)। আর লিবিয়ার দুজন হলেন ছোট নাওডুবি গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে শওকত মাতুব্বর (২৫) ও চানু মাতুব্বরের ছেলে রাসেল মাতুব্বর (৩৫)। চার বছর ধরে তাঁরা লিবিয়ায় থাকেন।

এ ঘটনায় ফয়সালের বাবা ফারুক মাতুব্বর বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১০ জনকে আসামি করে মানব পাচার আইনে একটি মামলা করেন। 

এ বিষয়ে মামলার নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পীযূষ কান্তি দে  জানান, মামলার আসামি হান্নান মাতুব্বর,তাঁর ছেলে তুহিন মাতুব্বর ও আসামি কাজল মাতুব্বরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here