বিরোধে ঝুলছে অর্থনৈতিক অঞ্চল | Economic zones are in conflict

0
139
AVvXsEiaOuhElSIWydVfUcoxJC6ogvcDqWwgHUSVPAUQMRMUxllkgUxPE9qPa5Ue5mctFH1m1Aqk7 hCj5t3qCo ljTNQesh7MWINCTbaAsdJ6JUYhA7xziHqD1CRmxU2ZhFipl6B4LTmfuRIuGR89kvH4RxW3PfjbClIyA6appjpBvTI6wSrji7 rbgVg2m=s16000

 দেশের দুই শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যকার বিরোধের কারণে তিন বছর ধরে ঝুলে আছে নতুন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। এটির নাম কাজী ফার্মস অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রস্তাবিত এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি নিয়ে সানোয়ারা গ্রুপের সঙ্গে কাজী ফার্মস গ্রুপের রশি-টানাটানি চলছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দুই ব্যবসায়ী গ্রুপকে সমঝোতায় আনার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। সে জন্য বেজা এখনো কাজী ফার্মসকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের লাইসেন্স দেয়নি।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ১৩০ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে তাদের কাছে কাজী ফার্মস গ্রুপ ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করে। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেজার এক বোর্ড সভায় কাজী ফার্মস অর্থনৈতিক অঞ্চলটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর গত তিন বছরেও জমি নিয়ে জটিলতার কারণে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কাজী ফার্মস গ্রুপ।

জানতে চাইলে কাজী ফার্মস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী জাহেদুল হাসান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চন্দনাইশে আমরা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চাই। সে জন্য সানোয়ারা গ্রুপ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেছি। সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ আছে সেখানে বিনিয়োগে। তাঁদের আমরা জমি লিজ দেব।’

দুই পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে কাজী ফার্মস গ্রুপ ২০১৫ সালে সানোয়ারা গ্রুপের কাছ থেকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ১৩০ একর জমি কেনে। কিন্তু এরপর কাজী ফার্মস অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রক্রিয়া শুরু করতেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধের প্রেক্ষাপটে সানোয়ারা গ্রুপ ২০১৯ সালে বেজায় অভিযোগ করে, কাজী ফার্মস যে জমি অধিগ্রহণ করেছে, সেখানে পুরোপুরি সীমানা নির্ধারণ (ডিমারকেশন) করা হয়নি। অভিযোগের জেরে বেজা নিজস্ব কার্যালয়ে একাধিকবার শুনানি করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমাধান হয়নি।

উভয় পক্ষকে শুনানিতে ডাকার পর বেজা সিদ্ধান্ত দেয়, সানোয়ারা গ্রুপ থেকে কাজী ফার্মস যে জমি নিয়েছে, তাতে কোনো জটিলতা দেখা যাচ্ছে না। সানোয়ারা গ্রুপের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিসংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই। তবে বেজা জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করতে গিয়ে পাশের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জমিতে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সেটি কিন্তু কাজী ফার্মস গ্রুপকে নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে বেজার সিদ্ধান্তে খুশি না হয়ে একই বছরে, অর্থাৎ ২০১৯ সালে আদালতে মামলা করে সানোয়ারা গ্রুপ, যা এখনো চলছে। আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজী ফার্মসকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের লাইসেন্স দেওয়া হবে না বলে বেজা জানিয়ে দিয়েছে। বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। তাই এখানে বেজার কিছুই করার নেই।


দুই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সানোয়ারা গ্রুপ চায় না সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হোক। কারণ, জমি কেনার সময় বিষয়টি তাদের জানায়নি কাজী ফার্মস গ্রুপ। তাই এ নিয়ে তাদের অসন্তোষ আছে। এ ছাড়া সেখানে সানোয়ারা গ্রুপের আরও জমি রয়েছে। অবশিষ্ট জমিও কিনে নিতে কাজী ফার্মসকে অনুরোধ করেছিল সানোয়ারা গ্রুপ। কিন্তু সেই জমির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছিল কাজী ফার্মস। তাদের দাবি, অবশিষ্ট ওই জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে। এই অস্বীকৃতির পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বিষয়টি বেজা থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

এ নিয়ে সানোয়ারা গ্রুপের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি নিয়ে কাজী ফার্মসের সঙ্গে কিছু ঝামেলা হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আশা করছি, উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সুরাহা হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে কাজী ফার্মস অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, সেখানে মোট জমি আছে ৩০০ একরের মতো। এর মধ্যে ১৩০ একর অধিগ্রহণ করেছে কাজী ফার্মস। বাকি ১৭০ একরের মতো জমি কাজী ফার্মস নেবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা চাই, তারা বাকি জমিও কিনে নিক।’

এ সম্পর্কে সম্প্রতি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে বেজার বোর্ড সভায় যখন কাজী ফার্মস গ্রুপের অর্থনৈতিক অঞ্চলটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন তাদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। তারা সেসব শর্ত এখনো পূরণ করতে পারেনি। জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। দুই ব্যবসায়ী গ্রুপ যদি নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে কিংবা সমঝোতা করে, তাহলে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হবে।

শেখ ইউসুফ হারুন আরও বলেন, কাজী ফার্মস যেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার মাঝখানে আরও বেশ কিছু জমি আছে। সেই জমির কী হবে, তারও সুরাহা হওয়া উচিত।

এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের লাইসেন্স পাওয়ার আগে বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তিপত্র নিতে বলা হয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তা পায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here