মুরাদ হাসান: তারেক রহমানের কন্যা জাইমাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় বিএনপি | Murad Hasan resigns

0
180

AVvXsEj1voRhBpelTBWgo95XbO7di9GOd7J YGOcALW0fKAsq1FabfOr57NCcDu8 NzzMCXd85o0TdgVvs4t4BrDeHGPlk7iI9V0Mriy5rtHfOVTIO8rf ysJ7MglJDysyy1Iv1sXbRHhaRWBbhEU8rOgZfcs 6jYdsPVXyWdXr1dDj 67i7pwtJY6DGwq =s16000

তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করায় বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধী দল বিএনপি।

তবে মি. হাসান বিবিসিকে বলেছেন, তিনি এসব বক্তব্য দিয়ে কোন ভুল করেননি।

এদিকে, চলমান এই সমালোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে একজন চিত্রনায়িকাকে নানা অশোভন কথাবার্তা ও হুমকি দিতে শোনা গেছে এক ব্যক্তিকে।

ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে তাকে মুরাদ হাসান বলে মনে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে মি. হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা:

জাইমা রহমানকে নিয়ে মি. হাসান অশালীন ও বর্ণবাদী বক্তব্য দেন এক ফেসবুক লাইভে। বেশিরভাগই প্রকাশযোগ্য নয়।

তবে সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ”আমার মুখ ভীষণ খারাপ।”

পরে গত শনিবার এক টিভি টকশোতে আরেক বিএনপি নেত্রীকে আক্রমণ করে কথা বলেন মি. হাসান।

সেখানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আলোচনার এক পর্যায়ে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ এবং তার ‘চিকিৎসা দরকার’ বলে মন্তব্য করেন মুরাদ হাসান। সেই সময় দুইজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়।

এই দুটি ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি মি. হাসানের দল, আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেই ফেসবুকে মি. হাসানের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

বিবিসিকে মুরাদ হাসান যা বলেছেন:

এর আগেও নানা রকম বক্তব্যের জন্য আলোচনা উঠে এসেছেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি মি. হাসান।

বিবিসিকে তিনি বলেন, তিনি বক্তব্য দেয়ার আগে তাকে ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ করে কথা বলেছেন তারেক রহমানের কন্যা।

”আমার মেয়ের বয়সের চেয়ে সে এক বছরের বড়। আমার কন্যার মতো বয়সী হয়ে যে নোংরা ভাষায় আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে, সেটা তো কুচিন্তনীয়। এটা আমার কাছে খুব দুঃখজনক মনে হয়েছে। তার সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমের অনেক ছবি আমার কাছে চলে এসেছে।”

আর টকশোতে হাজির হয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আক্রমণ করে মন্তব্য করা প্রসঙ্গে মি. হাসান বলেন, ”আপনি যদি ওই টকশোটা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কেন বলেছি”।

“আমি একজন চিকিৎসক। সেই হিসাবে তার সম্পর্কে আমার যে অবজারভেশন, সেটা আমি বলেছি। সেটা ভুল হলে আমি দুঃখিত।”

তবে সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্য, মুরাদ হাসান যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতেন, তাহলে তিনি “দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না।”

সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া

পেশায় চিকিৎসক মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোকে ভুল বলে স্বীকার করেন কি না কিংবা প্রত্যাহার করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”প্রশ্নই ওঠে না।”

মি. হাসান বিবিসিকে আরো বলেন, তার বক্তব্য নিয়ে নানারকম সমালোচনা হলেও তার ওপর দল বা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য প্রত্যাহারের কোন চাপ নেই।

মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দাবি

তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে অশালীন ও বর্ণবাদী বক্তব্য দেয়ায় তীর্ব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, তাকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ এবং ৪০ নারী অধিকার কর্মী আলাদা বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সরকার দাবি করেন যে তারা নারীবান্ধব। নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান রেখে কথা বলতে পারেন না সেই ব্যক্তি তারপরও কি করে পদে বহাল থাকেন?’

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নারীপক্ষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

এর আগে এরকম একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন আলোচককে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য করে কারাগারে যেতে হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে।

তবে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেনের এসব বক্তব্যের বিষয়ে দল বা সরকারি তরফ থেকে প্রকাশ্যে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।

‘জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা না থাকাই প্রধান কারণ’

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দল বা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য নতুন বা অভিনব কিছু নয়। বিশেষ করে প্রধান দলগুলোর নেতাকর্মীদের একে অপরকে উদ্দেশ্য করে কাঁদা ছোড়াছুড়ি অনেকটাই নিয়মিত ব্যাপার।

কিন্তু সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিদের এরকম বিষয়ে জড়িয়ে পড়াটা রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য কতটা ভালো?

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বাংলাদেশের সমাজটাই আসলে নারীবিদ্বেষী এবং বর্ণবাদী। আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা এর ঊর্ধ্বে নন। সে কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই আমরা কট্টর নারীবিদ্বেষী মন্তব্য শুনি। আমাদের অনেকের মধ্যে বর্ণবাদী মনোভাবও রয়েছে।”

”কিন্তু এখানে সরকারের একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, যিনি সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, যিনি সংবিধান মেনে শপথ নিয়েছে, সেখানে এই ধরনের কথা বলা সংবিধানের বরখেলাপ। এই ধরনের কথা বলার সাহস তখনি তারা পান, যখন এসব কথা বলার জন্য তারা তিরস্কৃত হন না, বরং পুরস্কৃত হন।” মি. আহমেদ বলছেন।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ”আমার কাছে অনেক সময় মনে হয় এগুলো বেফাঁস মন্তব্য, আসলে তা নয় । এটা শুধু যে আওয়ামী লীগের লোকজনই করেন, তা নয়। বিএনপি নেতাদের মুখেও আমরা এ ধরনের মন্তব্য অতীতে বা বর্তমানে শুনেছি। আসলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা না থাকার কারণে তারা একেবারেই বেপরোয়া হয়ে গেছেন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here