যুদ্ধ থামাতে পুতিন কী কী চান, ফোনে জানালেন এরদোয়ানকে

0
125

 নতুন করে পুতিনকে যে প্রস্তাব দিলেন এরদোগান
Erdogan’s new offer to Putin

%E0%A6%A6%E0%A7%88%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%20(3)ইউক্রেইন সংকটে খুব সতর্কতার সঙ্গে মস্কো ও কিইভের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছে আঙ্কারা, দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে তারা।

বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানকে; একটি শান্তি চুক্তির জন্য মস্কোর শর্তগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তিনি তুলে ধরেছেন।

দুই নেতার ফোনালাপ শেষ হওয়ার আধঘণ্টার মধ্যে বিবিসি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনের সাক্ষাৎকার নেয়। দুই প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ যারা শুনেছেন, সেই হাতেগোণা কর্মকর্তাদের একজন ইব্রাহিম কালিন।

তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানাচ্ছে, রাশিয়ার দাবিগুলো দুই ভাগে বিভক্ত।

ইব্রাহিম কালিনের ভাষ্যে, সম্ভবত প্রথম চারটি দাবি ইউক্রেইনের জন্য পূরণ করা কঠিন হবে না।

image 527526 1646575504এরমধ্যে প্রধান দাবিটি হচ্ছে, ইউক্রেইনকে মেনে নিতে হবে যে তারা ‘নিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে থাকবে এবং নেটো জোটে যোগ দেওয়ার আবেদন করবে না। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এরইমধ্যে এ দাবি এক রকম মেনে নেওয়ার ইংগিত দিয়েছেন।  

বিবিসি লিখেছে, প্রথম ভাগের অন্য দাবিগুলো অনেকটা রাশিয়ার মুখরক্ষার চেষ্টা; যার মধ্যে আছে ইউক্রেইনকে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে এটা নিশ্চিত করা, অর্থাৎ তাদের দেখাতে হবে, রাশিয়ার জন্য তারা হুমকি হবে না। ইউক্রেইনে রুশ ভাষা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং কথিত নাৎসী-মুক্তকরণ প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

নাৎসীদের সঙ্গে নিজের নাম জড়ানো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য খুবই অপমানজনক, কারণ তিনি নিজে একজন ইহুদি এবং তার স্বজনরা হলোকাস্টে মারা গেছেন।

অবশ্য তুরস্কের ধারণা, এ দাবি মেনে নেওয়া জেলেনস্কির জন্য সহজই হবে। সম্ভবত যে কোনো ধরনের নব্য-নাৎসীবাদের নিন্দা জানানো এবং সেগুলোকে দমন করাই ইউক্রেইনের জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে করছে আঙ্কারা।

বিবিসি বলছে, রুশ দাবিনামার দ্বিতীয় ভাগ নিয়েই জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তবে সেই দাবিগুলো নিয়ে ইব্রাহিম কালিন খুব স্পষ্ট করে কিছু বলেননি । তিনি ধারণা দিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেইনের দনবাস অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া নিয়ে দর কষাকষি হতে পারে।

কালিন স্পষ্ট না করলেও বিবিসির ধারণা, ইউক্রেইন সরকারের কাছে সেদেশের পূর্বাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই অঞ্চলের অধিকার ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলবে রাশিয়া।

আরেকটি ধারণা হচ্ছে, ইউক্রেইনকে মেনে নিতে হবে যে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ, ২০১৪ সালে ওই অঞ্চলটি দখল করে নেয় রাশিয়া।

পুতিনের দাবি যদি এগুলোই হয়, তাহলে ইউক্রেইনকে হয়ত একটি তেতো ট্যাবলেট গেলার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।

অবশ্য বিবিসি লিখেছে, এতো সহিংসতা, রক্তপাত ও ধ্বংসলীলার বিপরীতে সবমিলিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের চাওয়া অতটা কঠিন বলে মনে হচ্ছে না, কারণ অনেকেই ধারণা করেছিলেন, পুতিন হয়ত আরও কঠিন কিছু চেয়ে বসবেন।

erdogan putin 2এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন জানিয়েছেন, এসব দাবি পূরণ হওয়া সাপেক্ষে চুক্তি করার আগে তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে মুখোমুখি বসতে চান। অবশ্য জেলেনস্কি অনেক আগে থেকেই রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

রাশিয়ার গণমাধ্যমের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকায়, পুতিনের জন্য এই দাবি পূরণকে দেশবাসীর সামনে বিশাল বিজয়গাথা হিসেবে তুলে ধরতে তেমন বেগ পেতে হবে না।

যদিও ইউক্রেইনের জন্য এরপরেও তা গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে থাকবে। যদি চুক্তির সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মীমাংসা করা না হয়, সেক্ষেত্রে তা প্রেসিডেন্ট পুতিন বা তার উত্তরসূরীদের জন্য আবারও ইউক্রেইনে হামলার ছুঁতো যোগাতে পারে।

বিবিসি ইব্রাহিম কালিনের কাছে জানতে চেয়েছিল, ফোনালাপের সময় প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে এসেছে কি না।

জবাবে কালিন বলেছেন, “একদমই না।” তার ভাষ্যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন খুবই স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে সবকিছু বলেছেন, কোনো ধরনের অস্পষ্টতা ধরা পড়েনি তার বক্তব্যে।

নতুন করে পুতিনকে যে প্রস্তাব দিলেন এরদোগান

111137472 gettyimages 1192550633তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দপ্তর বিবৃতিতে জানিয়েছে, এরদোগান পুতিনকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি যেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসেন। 

প্রেসিডেন্টর দপ্তর আরও জানিয়েছে, এরদোগান পুতিনকে বলেছেন তাদের দুইজনের মধ্যে বৈঠকটি তুরস্ক আয়োজন করতে চায়। পুতিন চাইলে বৈঠকটি আঙ্কারা বা ইস্তানবুলে হতে পারে। 

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, এরদোগান পুতিনকে বলেছেন সবার আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন তিনি। যুদ্ধবিরতি হলে সমস্যা সমাধানের স্থায়ী পথ খুলে যাবে। 

তাছাড়া এরদোগান মানবিক করিডোর তৈরির ব্যাপারেও পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

এদিকে রাশিয়াকে যুদ্ধ থামানোর জন্য অনুরোধ করছেন বিশ্বনেতারা। সঙ্গে পুতিনকে দেওয়া হচ্ছে হুমকি ধামকিও। 

তবে পুতিন যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি। 

বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় পুতিন জানান, ইউক্রেনে তিনি যে  লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে।

যদি আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে তাহলে ভালো। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক অভিযানেই তা অর্জন করার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

সূত্র: আল জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here