দশম জাতীয় কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকা রাখতে হবে: আ ক ম মোজাম্মেল হক
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই কবিসংসদ বাংলাদেশের মূল ভিত্তি : প্রফেসর মু. নজরুল ইসলাম তামিজী
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকা
কবি সংসদ বাংলাদেশ কর্তৃক ১৯ মে ২০২৩ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি সম্মেলন ২০২৩। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকার তাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী ও কবিসংসদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. নজরুল ইসলাম তামিজী। কবি সংসদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজু আলীম এর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক নাসির আহমেদ।
কোরআন থেকে তেলাওয়াত , গীতা পাঠ, ও জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, দশম জাতীয় কবি সম্মেলন এর আহবায়ক কবি ও কথা সাহিত্যিক জয়শ্রী দাস। দিনব্যাপী সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন কবি সংসদ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কবি ও ছড়াকার তৌহিদুল ইসলাম কনক। উদ্বোধনী অতিথি ছিলেন লেখক গবেষক মোস্তাক আহমাদ, জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কবি শিহাব রিফাত আলম, ২৯তম বঙ্গবন্ধু কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী খান চৌধুরী মানিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক অশোক ধর, কবি আসাদ কাজল, ডক্টর ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী সভাপতি কবি ও সাংবাদিক আমিনুল রানা, গীতিকবি এমএ করিম, কবি শামস মনোয়ার, ভারতীয় কবি জয়ন্তী চক্রবর্তী, বাপসা এর সাবেক সভাপতি এইচ এম রেজাউল করিম তুহিন, ড. এম শহীদুল ইসলাম এডভোকেট, বাপসা সাবেক সভাপতি শেখ মো. হাবিবুর রহমান, কবি মালেক মাহমুদ, কবি ও সাংবাদিক আব্দুর রশিদ চৌধুরী , কবি এম আর মঞ্জু, বাপসা সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে বিরোধীরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ অপশক্তি যাতে দেশে শেকড় গাঢ়তে না পারে সে জন্য কবি সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষকে সচেতন থাকতে হবে’।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রফেসর মু. নজরুল ইসলাম তামিজী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই কবিসংসদ বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। ‘বঙ্গবন্ধু কবিতা উৎসব’ শিরোনামে এ পর্যন্ত মোট ২৮টি এবং দেশের জেলা পর্যায়ে শতাধিক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৪টি কবি সম্মেলন করেছে এ সংগঠন। নবীন কবিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কবিসংসদ বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়’।
সারা দেশ থেকে আগত ২০০ কবি জাতীয় কবি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি ইকবাল হোসেন, কবি সুপর্ণা দাস, কবি রেবেকা রিবা, কবি শিপন হোসেন মানব, কবি মাদবর রফিক, কবি প্রদীপ মিত্র, কবি ফারুক প্রধান, কবি অরণ্য মজিদ,কবি কুমকুম কবির, ড. হাফিজুর রহমান, মোহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ, অনুরাধা রায়, হালিমা বেগম, কবি মঈনুল ইসলাম টিপু, কবি রুবেল আহমেদ, কবি সম হাফিজুল ইসলাম, কবি মাহমুদা খানম, কবি মায়াবী হোসাইন, কবি কামরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন দামাল, কবি নমিতা সরকার, কবি রানা মুসাফির, কবি ও সাংবাদিক আতাউল্লাহ খান, জালাল উদ্দিন নলুয়া, লুৎফা জালাল, কবি আলী মুহাম্মদ লিয়াকত, কবি শেখ আবদুল চাষী। পালকি শিল্পীগোষ্ঠীর সার্বিক সহযোগিতায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতায় অভিনয় করেন অভিনেতা এবি বাদল।
দেশের কবি সাহিত্যিকদের ধারণ ও লালন করতে হবে
বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: (দেশের কবি সাহিত্যিকদের ধারণ ও লালন করতে হবে) নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের কবি-সাহিত্যিকদের জানতে হবে; সেটাকে ধারণ ও লালন করতে হবে যেন কোনো অপসংস্কৃতি আমাদের মধ্যে আঘাত না করে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হচ্ছে সংস্কৃতি। আমরা যদি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সোনার বাংলা বিনির্মাণ হতে যাচ্ছে; সেটা ধরে রাখতে পারব। প্রতিমন্ত্রী আজ দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল মঞ্চে তিন দিনব্যাপী জাতীয় চারণ কবি উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী এর আগে বোচাগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল মঞ্চের উদ্বোধন করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কবির নাম আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি চারণের বেশে নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের নদীর তীরে তীরে, পাহাড়ে পাহাড়ে, পর্বতে পর্বতে; সমতলে ঘুরেছেন। তিনি ৬৪ জেলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর মানুষের সাথে কথা বলেছেন, জেনেছেন এবং সকলের সম্মিলিত উচ্চারণ যেটা আমরা ৭ই মার্চের ভাষণে পাই। তিনি যে কবিতাটা পড়েছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এটাই আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা। যে কবিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে; অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যে কবিতার পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সোনার বাংলা বিনির্মাণ হতে যাচ্ছে; সে সোনার বাংলাকে ধরে রাখতে চাই। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। যেহেতু রক্ত দিয়ে আমাদের এ সংস্কৃতি কেনা হয়েছে; ইতিহাস রচনা করা হয়েছে-তাই কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারেনি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ারা অনেক ষড়যন্ত্র করেও বাংলাদেশের মানুষকে অভীষ্ঠ লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে মাহাথীরকে ছাড়িয়ে গেছেন। আগামী দিনের পৃথিবী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলবে। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
সুষ্ঠু সমাজ গঠনে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকা
নিঃসন্দেহে কবি সাহিত্যিক ও লেখকগণ সমাজের অন্যতম জ্ঞানী ও দূরদর্শী জ্ঞান সমপন্ন ব্যক্তিত্ব। তাদের চিন্তা চেতনার প্রখরতা সমাজের অন্য লোকদের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের কাছে যে বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয়, তা অন্যদের চোখে খুব সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। তাইতো সুষ্ঠু সমাজ গঠন ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সুষ্ঠু সমাজ গঠনে কবি -সাহিত্যিকদের ভূমিকা: আধুনিক যুগে মান্ষু শুধু সাহিত্যের রস গ্রহণ করেই শুধুই পরিতৃপ্ত নয়; বরং সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আলোকিত সমাজ গঠন করতে প্রয়াসী। সুতরাং পাঠককে কেবল আনন্দ দেয়াই নয়; বরং সভ্যতার পথে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার গুরুদায়িত্ব সাধারণভাবে কবি সাহিত্যিকদের ওপর পড়ে। অতএব ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধন যে সাহিত্যের উদ্দেশ্য নয়, তা পাঠ করা ক্ষতিকর। কেননা জাতি গঠনে সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
মানুষের কল্যাণেই সাহিত্যের উৎপত্তি। বাংলা সাহিত্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে, যুগে যুগে এই সাহিত্য মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। ঘুণেধরা সমাজকে আলোয় আলোয় ভরে দিয়েছে। সুষ্ঠু সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গঠনে যেমন মানবতাবাদী পরিচ্ছন্ন সাহিত্য – সংস্কৃতি অপরিহার্য, তেমনি মানবতাবিরোধী অশ্লীল সাহিত্য – সংস্কৃতি যে কোন সমাজকে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। এ কারণেই ইসলাম এসেই সাহিত্যের যে ধারা জাহিলী যুগ থেকে চলে আসছিল তার রূপ পাল্টে দেয়।
সমাজ ও সাহিত্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজের মানুষের রীতিনীতি ও সংস্কার নিয়েই সাহিত্যের উৎপত্তি। মানব সমাজের ওপর সাহিত্যের প্রভাব অনেক বেশি। যুগে যুগে বহু সাহিত্য মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে সাহায্য করেছে। কবি সাহিত্যিকদের জ্বালাময়ী লেখনীর প্রভাবে অনেক বিপ্লব সাধিত করে সাহিত্য মানুষের সীমাহীন কল্যাণ সাধন করেছে। মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হলে প্রথমে বোধের উন্মেষ ঘটাতে হবে। সাহিত্যই পারে মানবতার হৃদয়ে বোধের উন্মেষ ঘটাতে। যথার্থ সাহিত্য ছাড়া এর স্বরুপ উন্মোচন হয় না। এ জন্য সুস্থ ধারার কবি সাহিত্যিকদের উৎকৃষ্ট সাহিত্য মানব হৃদয়কে পারে অনাবিল শান্তির ফল্গুধারা উপহার দিতে এবং মহাকল্যানের দ্বার উন্মোচিত করতে।
সুষ্ঠু সমাজ : বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের মতে সমাজের অর্থ সাধারণত পরস্পর সহযোগিতা ও সহানুভূতির সঙ্গে বসবাসকারী মনুষ্যগোষ্ঠী, জাতি, সংঘ, সম্প্রদায় ইত্যাদি বুঝালেও সমাজ বলতে এখানে মানব সমাজই বুঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ পরষ্পরের সহযোগিতায় অবস্থানকারী মনুষ্য সঙ্গ। আর সুষ্ঠু অর্থ অতি সুন্দর, শ্রেষ্ঠ, সত্য, নিঁখুত, অনবদ্য, ত্রুটিবিহীন ইত্যাদি। সুতরাং সুষ্ঠু সমাজ বলতে আমরা বুঝি, এমন মানুষের সমাজ যাদের মনে হবে শুচি শুভ্র ও সুন্দর, কাজকর্ম হবে সত্যাশ্রিত এবং ভাবনা ও পরিকল্পনাগুলো হবে সত্য ন্যায়ের আরোকদীপ্ত। প্রকারান্তরে সুষ্ঠু সমাজ হচ্ছে এমন সমাজ যাতে থাকবে না চুরি- রাহাজানি, থাকবে না নিরাপত্তার ঘাটতি, সেখানে থাকবে সুকুমার বৃত্তির চর্চা, যেখানে মান্ষু মিলেমিশে সদ্ভাব ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করবে। সত্যের প্রতি অবিচলতা আর অসত্যের প্রতি কঠোর মনোভাব হচ্ছে সুষ্ঠু সমাজের সদস্যদের অপরিহার্য গুণ এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ হচ্ছে তাদের নিত্যদিনের কর্মসূচি। যে সমাজের নিজস্ব ঐতিহ্য থাকবে, নিজস্ব সংস্কৃতি থাকবে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কোনো ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু সমাজ পরনির্ভরশীল হবে না। বরং স্বকীয়তা নিয়ে সে আলো ছড়াবে, সুবাস বিলাবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মহানবী (সা:) পৃথিবীকে যে সমাজ উপহার দিয়েছিলেন তার চেয়ে সুন্দর সুষ্ঠু সমাজ মানবজাতির ইতিহাসে আর নেই। মদিনায় তিনি যে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন– তা ছিল মানব সমাজের সেরা আদর্শ। সেই সমাজ কায়েমের ক্ষেত্রেও রাসূল সা: এর সাহিত্য চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভাষা ও সাহিত্যের এক সম্মোহনী শক্তি থাকে। কবিতা সাহিত্য বা গদ্য সাহিত্য যাই হোক তা মানুষের মনে প্রভাব ফেলবেই। ভালো হলে ভালো প্রভাব ফেলবে আর মন্দ হলে মন্দ। এ জন্যে যুগে যুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যত নবী রাসূল পাঠিয়েছিলেন, তাদের সবার মধ্যে উন্নত ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞান ছিল।