যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার বাংলাদেশের পাহাড়ি জেলাগুলো বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় এরকম ভয়াবহ বন্যা তারা আগে আর দেখেন নি।
বান্দরবানের লামার বাসিন্দা আব্দুল্লাহর বাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পুরো পরিবার উঁচু একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। তিনদিন ধরে তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, ফলে চার্জ করতে না পেরে মোবাইলও চলছে না। তাদের কাছে খাবারও খুব কম রয়েছে।
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার সোলার ব্যবহার করে বুধবার তিনি ১০ মিনিটের জন্য মোবাইল চালু করতে পেরেছিলেন। সেই সময় বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা হয় আব্দুল্লাহর।
‘’পরিস্থিতি খুব খারাপ। কোন দিন এভাবে এখানে পানি উঠবে ভাবি নাই, তাই কারো কোনরকম প্রস্তুতিও ছিল না।যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার অনেকটা হঠাৎ করে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঠে আসতে হয়েছে। কারও সাথে যোগাযোগও করতে পারছি না,’’ তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন।
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেল
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার কারণে সাঙ্গু আর মাতামুহুরি নদী উপচে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি আর কক্সবাজারের বহু অঞ্চল তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি এলাকাগুলোয় এর আগে এরকম বন্যা আর দেখা যায়নি।
বান্দরবান শহর এলাকাও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আর সাব-স্টেশনগুলোয় পানি ঢুকে পড়ায় গত তিনদিন ধরে শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। চার্জ দিতে না পারায় সেখানকার বেশিরভাগ যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার মানুষ মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদী যেসব এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে,যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার তার আশেপাশের সব এলাকাই বন্যাক্রান্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার বিআরইবি চট্টগ্রাম সূত্র জানায়, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। পটিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে সোমবার বিকেল থেকে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-টেকনিক্যাল) মো. আমজাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবস্টেশনগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩ উপজেলার ২ লাখ গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন।’
পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী দিয়ে
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার ভেসে আসা গাছের গুড়িতে লেগে সঞ্চালন তার ক্ষতিগ্রস্ত যাওয়ায় পটিয়ার বিদ্যুৎ বন্ধ আছে। তবে আমরা শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিকল্প সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পটিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। বাঁশখালীতে গতকাল ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। পানির কারণে মঙ্গলবার থেকে চন্দনাইশ উপজেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে,’ তিনি বলেন।
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোয় হঠাৎ এই বন্যার কারণ কী?
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোয় হঠাৎ করে এমন বন্যার পেছনে কয়েকটি কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘এবারের বন্যার পেছনে মূল কারণ হলো গত কয়েকদিনের বৃষ্টি। সাধারণত পুরো অগাস্ট মাসে বান্দরবানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় গড়ে সাড়ে চার শ’ মিলিমিটার। কিন্তু শুক্রবার (৪ আগস্ট) থেকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) এই পাঁচদিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে আট শ’ মিলিমিটারের বেশি। অর্থাৎ এক মাসের চেয়ে দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়ে গেছে পাঁচদিনে।’
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাতামুহুরি এবং সাঙ্গু নদীর স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা পার হয়ে গেছে, যে কারণে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। কারণ পাহাড়ের বিভিন্ন ঢল এবং বৃষ্টির পানি নদীতে একসাথে নামতে গিয়ে উপচে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। যেসব এলাকা দিয়ে এই দুটি নদী প্রবাহিত হয়েছে তার আশপাশের এলাকা মূলত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকট অতীতে এমন বন্যার উদাহরণ আর দেখা যায়নি।যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার বান্দরবানের লামা পয়েন্টে নদীর পানি বাড়ার যে রেকর্ড ছিল, সেটা এর মধ্যেই পার হয়ে গেছে। গত ৫০ বছরে এই পয়েন্টে গড় সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ৫০ মিটার, এবার সেটা হয়েছে ৫০ দশমিক চার শূন্য মিটার।
বন্যার পেছনে আরো কয়েকটি কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
রায়হান বলছেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রতি বছরই নানা কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি বহন করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে অতীতে এসব নদী যে পরিমাণ পানি বহন করতে পারতো, সেটা হারিয়ে ফেলছে। যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার ফলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হলে বা নদীতে পানি বেড়ে গেলে সহজেই আশপাশের এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে পাহাড়ি এলাকাগুলোয় নদীর কাছাকাছি নিচু এলাকায় আগে জনবসতি ছিল না। কিন্তু এখন সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। ফলে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকা বন্যাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার তবে বন্যার কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অপরিকল্পিত উন্নয়নসহ আরো কয়েকটি কারণ দেখছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যে রেললাইনটি তৈরি করা হয়েছে,যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার যেসব কারণে চট্টগ্রাম বন্যার সেখানে অনেক জায়গায় একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি চলাচলের জায়গা বা কালভার্ট রাখা হয়নি। ফলে আগে পাহাড়ি বৃষ্টিপাতের পানি নেমে যেতে পারতো কিন্তু এখন রেললাইনে এসে আটকে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে এসব পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।