আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি

0
132
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে অক্টোবর নাগাদ ‘সর্বাত্মক’ সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। একই সঙ্গে চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন হলে তাতেও যাতে দলটি অংশ নিতে পারে সেজন্যও চলছে নানা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি।

সরকার বিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবারই দেশের ৬৫০ জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

আর এ কর্মসূচি মূলত তত্ত্বাবধান করতে দেয়া হয়েছে সামনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এই কর্মসূচি তদারক করতে।

মূলত, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ মহানগরী গুলোর ১২৮টি সাংগঠনিক থানায় এবং সাড়ে ৫০০ উপজেলা মিলে মোট প্রায় সাড়ে ছয়শ জায়গায় একযোগে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছিলো যাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নিয়েছেন।

তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা শুধু বলছেন যে তাদের এখন একমাত্র চিন্তা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়।

“বিএনপি যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গিয়ে জয়ী হওয়ার মতো সক্ষম রাজনৈতিক দল। তবে আমাদের কাজ একটাই এখন আর তাহলো ভোটের অধিকার আদায়। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ঘোষণা আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের প্রস্ততিও নেয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে,” বলছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

যদিও দলীয় সূত্রগুলো বলছে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি এক সঙ্গেই চলছে যা দলটির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা তদারক করছেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র সাতটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলো। তবে দুটি নির্বাচন নিয়েই ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির সমালোচনা আছে।

দল গুছানো ও মিত্র বাড়ানো হচ্ছে এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি

সংসদ বাতিল করেন ১০০ বার নির্বাচনে যাব: মির্জা ফখরুল

প্রায় এক বছর আগে থেকেই দল গুছানোর কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। গত বছর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের যে কর্মসূচিগুলো বিএনপি পালন করেছিলো তার আগেই মাঠ পর্যায়ে দল গুছানোর কাজে হাত দিয়েছিলো বিএনপি।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থেকেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করার যে কর্মসূচি নিয়েছিলেন সেটি দলকে মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন দলীয় নেতারা।

ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত আলোচনা করেছেন মি. রহমান। এসব সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনও শেষ হয়েছে।

দলের নেতারা বলছেন ৫৫টিরও বেশি সাংগঠনিক জেলায় কমিটি হয়েছে এবং বাকীগুলোতেও চলমান আছে। সম্প্রতি সিলেট মহানগরের সম্মেলন হয়েছে। আবার গত মাসেই করা হয়েছে সিলেট জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি যেখানে এক নম্বর সদস্য করা হয়েছে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে।

এছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সক্রিয় করা হয়েছে সহযোগী সংগঠনগুলোকে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলছেন আন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আন্দোলন সফল করা, অর্থাৎ নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অর্জন করাটাই হলো বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি।

“নির্বাচনের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের মাধ্যমেই বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

দল গুছানোর পাশাপাশি ছোটো বড় বিভিন্ন দলকে সঙ্গে রাখার জন্যও কাজ করছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

সমমনা দলগুলোকে এক জায়গায় রেখে যুগপৎ ভাবে কর্মসূচি পালন করছে দলটি।

মাঠে প্রার্থীদের সক্রিয় রাখা

বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলছেন নির্বাচনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতিই বিএনপির আছে এবং তার ভাষায় বর্তমান সরকারের পতন হলেই সেটি দৃশ্যমান হবে।

তবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে যে নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সক্রিয় করা হয়েছে আগেই।

সাম্প্রতিক কালের জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক কর্মসূচিগুলোতে তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে দেয়া হয়েছে।

দলের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে এলাকায় পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচির সময়।

শনিবার যে সাড়ে ছয়শ জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দলটি তাতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরাই।

“আমরা মনে করি এর মাধ্যমে প্রার্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং আন্দোলনও জোরদার হচ্ছে,” বলছিলেন বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা।

বিএনপির এই নেতা বলেন স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যারা যে পর্যায়েই আছেন তারা এর মধ্যেই নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়ে গেছেন।

তার মতে বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি আসলে শুরু হয়েছে গত বছরের বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়েই। তখন জেলা ও থানা থেকে দলীয় কর্মী সমর্থকদের বিভাগে এনে সমাবেশগুলো ‘সফল’ হয়েছিলো বলে মনে করেন দলটির অন্য নেতারাও।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে বিএনপি কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে তার একটি রূপরেখা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগেই দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত. ২০১৭ সালের মে মাসে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভিশন ২০৩০’ নামে ওই রূপকল্প ঘোষণা করেছিলেন খালেদা জিয়া।

ওই রূপকল্পে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন, তাতে সবাইকে নিয়ে এক ‘রেইনবো নেশন’ বা রঙধনু জাতি গড়ার কথা বলেছিলেন তিনি।

এরপর গত দশই ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থেকে দশ দফা ঘোষণা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন ভিশন ২০৩০ আর ১০ দফা মিলেই বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার। “এর বাইরে তো কিছু বলার নেই। বিএনপি কী চায়, কী করবে এবং ক্ষমতায় গেলে কি হবে সবই এ দুটিতে বলে দেয়া হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

দলের নেতারা বলছেন এগুলো নিয়ে দলের একটি টিম আগে থেকেই কাজ করছে এবং দল চাইলে যে কোনো সময়েই তারা ইশতেহার চূড়ান্ত করে দলের হাতে তুলে দেবেন।