আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার পরের দিনই নিজের সেই ঘোষণা তুলে নিলেন ক্রিকেটার অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল । ফলে এশিয়া কাপ থেকে অধিনায়ক হিসেবে আবারো তিনি জাতীয় দলে ফিরছেন তিনি।
আজ (শুক্রবার) সকালে তামিম ইকবাল ঢাকায় আসেন, এরপর দুপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনে যান তিনি।
সেখানে এক আবেগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এসময় তামিমের স্ত্রী আয়েশা ইকবালও ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামিমের কাছে জানতে চান, কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত।
এরপর তামিমকে তিনি ক্রিকেটে ফিরতে বলেন।
তবে তিনি এখনই ক্রিকেটে ফিরবেন না।
প্রধানমন্ত্রী তামিম ইকবালকে দেড় মাসের ছুটিও দিয়েছেন জানিয়েছেন তামিম ইকবাল।
এই সময়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে তামিম বলেছেন, ‘আজ দুপুরবেলায় আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। উনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে।’
গণভবন থেকে বের হয়ে তামিম খেলায় ফেরার ঘোষণা দেন, “আমি আমার রিটয়ারমেন্ট এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব”।
তিনি বলেন এই ফিরে আসায় ‘পাপন ভাই ও মাশরাফি ভাইয়ের’ বড় ভূমিকা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল।
“প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেড়মাসের জন্য একটা ছুটিও দিয়েছেন। আমি যেন মানসিকভাবে আরেকটু ফ্রি হতে পারি।”
নিজের ফেসবুক পোষ্টে তামিম ইকবাল লিখেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে না বলতে পারলাম না। সাথে প্রধানমন্ত্রী ও স্ত্রীর সাথে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের বলেছেন, “আবেগের বশে ও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে ওর সাথে সামনাসামনি যদি বসতে পারি তাহলে হয়তোবা এটার একটা সল্যুশন পাবো।”
“আজকে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যেমে আমরা সবাই ওর সাথে বসেছিলাম। সে বলেছে যে, রিটায়ারমেন্টের যে চিঠিটা সে দিয়েছিল সেটি সে উইথড্র করছে। সে রিটায়ারমেন্ট করে নাই।”
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর এই নতুন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়ে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেইজে এক পোস্ট দেন মাশরাফি বিন মর্তজা। দুটি ছবি পোষ্ট করে তার ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘আবার দেখা হবে, এ দেখাই শেষ দেখা নয়’।
এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে অনেকটা হুট করেই তামিম ইকবাল একটি সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন।
সেখানে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে ম্যাচই তার শেষ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
তামিম ইকবাল এমন এক সময় ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন যখন ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হতে আর তিন মাস বাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল।
কী বলেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে? অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে অনুরোধ করে বলেছিলেন, “আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন, অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। কেন, কী, কী হতে পারতো, এটা শেষ করেন এখানেই”।
এখন পর্যন্ত তামিম ইকবালের ক্রিকেট জীবনে যারা সাথে ছিলেন, সতীর্থ ছিলেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
“যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে অনুশীলন করেছি তাকে ধন্যবাদ জানাই, আমি যাদের সাথে প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় দল, জাতীয় লিগে যাদের সাথে ক্রিকেট খেলেছি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই”।
“ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাকে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে, অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছে”।
তামিম ইকবাল বিদায় জানানোর সময় নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, “হয়তো আমিম ততটা ভালো নেই, অথবা ভালো, আমি জানিনা কিন্তু আমি আমার শতভাগ চেষ্টা করেছি যখনই মাঠে ছিলাম”।
তিনি যোগ করেন, “আমি আশা করি আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়াটা সহজ না আশা করি আপনারা বুঝবেন।”
তামিম ইকবাল এর আগে ২০২১ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, এরপরের বছর তিনি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেন।
বিদায় জানানোর সময় তামিম ইকবাল বলেন, “আমি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করতেই ক্রিকেট খেলেছি”।
এই হঠাৎ অবসরের কোনও কারণ তিনি বলেননি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিক একুশ তাপাদার বলেন, “তামিম ইকবালের আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে যাচ্ছিল, তার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সঙ্গে বিসিবি প্রধান তাকে নিয়ে করা মন্তব্যের পর আবহটা বদলে যায়। এসব মিলিয়েই তিনি হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।।”
তবে তামিম ইকবাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেও বিশ্বকাপে লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন।
অর্থাৎ এই দুই দিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
মূলত প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল বলেছিলেন, তিনি মাঠে নেমে বুঝতে পারবেন তিনি ফিট কি না।
গণমাধ্যমে খবর এসেছে তার এই কথায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল।
পুরো ফিট না হয়ে তামিম ইকবালের খেলার কথা শোনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনও নেতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ও তামিম শেষ ওয়ানডেতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল ২১ বলে ১৩ রান তোলেন।
তামিম ইকবাল অনেকদিন ধরেই পিঠের চোটে ভুগছিলেন, চলতি বছরও বেশ কটি সিরিজ ও ম্যাচ মিস করেছেন তিনি।
তামিম ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন, তিনি এখন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরিও তামিম ইকবালের- ১৪টি।
তামিম অধিনায়ক হিসেবে ৩৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে ২১টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তামিম ইকবাল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক হিসেবে বিদায় নিয়েছেন।
তিনি প্রায় ৩৯ গড়ে ৭০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, সেঞ্চুরি করেছেন ১০টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল।