গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জায়েদা খাতুনের চমক

0
25
আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জায়েদা খাতুনের চমক
আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জায়েদা খাতুনের চমক

আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জায়েদা খাতুনের চমক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তিনি।

জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন
গাজীপুরের নব নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। ছবি-সংগৃহিত

৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
মাঝরাতে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন যে এই নির্বাচনে ‘নৌকা জিতেছে আর ব্যক্তি হেরেছে।’

“আমি এর আগে মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আমি আমার সকল অভিজ্ঞতা দিয়ে নগরবাসীর জন্য ভালো কাজগুলো করতে সহায়তা করতে চাই।”
গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও সাবেক আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন এবারের নির্বাচনের আগে হঠাৎই আলোচনায় আসেন তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর।

ফলাফলে এগিয়ে থাকার খবর পেয়ে জায়েদা খাতুনের সমর্থকরা ভিড় করেন বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের সামনে।
ভোট গ্রহণ শেষ হবার পর প্রাথমিক ফলাফল থেকে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।
গাজীপুরের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারও মনে হয়েছেন সেখানে মূলত আজমত উল্লা এবং জায়েদা খাতুনের মধ্যে প্রতিন্দ্বন্দিতা হতে পারে ।

ভোটকেন্দ্রে থাকা প্রিজাইডিং অফিসাররাও কিছু কেন্দ্রে টেকনিক্যাল সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া যারা ভোটার তাদের অনেককে বিশেষ করে বয়স্কদের ইভিএম এর ব্যবহার বুঝাতেও সময় লেগেছে বলে ভোট গ্রহণে ধীরগতি ছিল বলে জানান কর্মকর্তারা।
আর ভোটগ্রহণ ধীরগতিতে এগুনোর কারণে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। যদিও ভোটকেন্দ্রে থাকা ভোটাররা বিকাল চারটার মধ্যে ভোট দিতে পারেননি- তবে তাদের সবাই ভোট নেওয়ো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজীপুরে এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। তবে বিএনপির বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

৪৮০ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা, ১৬১৯৭ ভোটে বিজয়ী জায়েদা খাতুন

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর এই মিলনায়তনে অবস্থিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন2
ফলাফল ঘোষণা করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহিত

সব কেন্দ্রের ফলে দেখা যায়, ৪৮০ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
এ ছাড়া, মাছ প্রতীকে আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, লাঙ্গল প্রতীকে এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২, হাতপাখা প্রতীকে গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২, গোলাপ ফুল প্রতীকে মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬, ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রাশিদ ২ হাজার ৪২৬ এবং হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।

সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী দারুস সালাম মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেওয়া শেষে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেছিলেন, ‘সবসময়ই আমি জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আজকে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, আমি সেই রায় অবশ্যই মেনে নেব।’
কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে জায়েদা খাতুন বলেছিলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, হানড্রেড পারসেন্ট।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে জায়েদা খাতুনও বলেছিলেন, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো আছে।’

তবে, বেশকিছু কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা বাকি প্রতীকের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে থাকতে দেননি।

ভোট জমিয়ে জায়েদার জয়

Untitled design 1

ভোট জমিয়ে জায়েদার জয় ভোট মানেই কেন্দ্র দখলের অভিযোগ, ধাওয়াধাওয়ি, কম ভোটার উপস্থিতি—এই পরিস্থিতির বিপরীত চিত্র দেখা গেছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। গতকাল সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার আগেই কিছু কেন্দ্রে ছিল ভোটারের দীর্ঘ লাইন। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতি এবং কয়েকজন প্রার্থীর এজেন্ট না থাকা ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। ভোট চলাকালে সহিংসতা ঘটেনি।

আজমতের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান সকাল ৯টা ৫ মিনিটে টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ ভোটকেন্দ্র দারুস সালাম মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো। ইভিএমে ভোট দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।

নতুন ভোটারদের বিড়ম্বনা

নতুন ভোটারদের অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। হাড়িনাল কেন্দ্রে নতুন ভোটার শামসুন্নাহার, নাদিয়া আখতার ও আফসানা আখতার ভোটার নম্বর না পাওয়ায় ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা তিনজনই নতুন ভোটার। নতুন ভোটারদের এই সমস্যা আরো কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে।

কয়েকটি কেন্দ্রে দুপুরের পর ভোটার কমে যায়

দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১০০ নম্বর বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের কয়েকটি ভোটকক্ষ ভোটারশূন্য ছিল। কয়েকটিতে ছিল ১০-১২ জনের লাইন। কেন্দ্রের ৩ নম্বর ভোটকক্ষে গিয়ে ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নূরুল ইসলাম নামের এক ভোটার। তাঁর অভিযোগ, মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পর ইভিএম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে পারেননি। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তাঁকে জানিয়েছেন ওই দুই পদে তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কেন্দ্রটির ৩, ২ ও ৫ নম্বর ভোটকক্ষে নৌকা, হাতপাখা ও লাঙ্গল ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট আবদুল মান্নান জানান, সকালে তিনিসহ ছয়জন এজেন্ট কেন্দ্রে যান। ভোট শুরুর পরপরই আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁদের সবাইকে বের করে দেন। পরে ওই কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আওয়ামী লীগের কেন্দ্র কমিটির সচিব নূরুল ইসলাম ও সদস্য মাহফুজুর রহমানকে আটক করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়। সকাল ১০টা নাগাদ গাজীপুরের জয়বেদপুরের আজিম উদ্দিন কলেজ, গাজীপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্রে মহিলা ভোটার কম ছিল। দুপুরের পর মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে।

জায়েদা বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে’

নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে ভোট দেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তাঁর ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ভোট দিয়ে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশে খুশি।’

ভোট শুরুর আগেই ভোটারদের উপস্থিতি

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ৭টা থেকে সাতটি ভোটকক্ষের সব কটির বাইরে ছিল দীর্ঘ লাইন। নারী ভোটারদের লাইন একটু বেশিই লম্বা দেখা যায়। কেন্দ্রটিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার দুই হাজার ৩৫৬ জন। ভোট শুরু হলে ৮২ বছরের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে নিয়ে নাতির সঙ্গে ভোট দিতে আসেন কানাইয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের প্রবীণ ভোটার দিল মোহাম্মদ (৯৩)। ভোট দিয়ে বের হয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে যতবার ভোট দিছি, সিল মারছি। এইবার মেশিনে ভোট হইব শুইন্না আগেভাগেই আসছি।’
দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের গিরিজা কিশোর (জি. কে.) আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। প্রিজাইডিং অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৯২৯। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

প্রিজাইডিং অফিসার আসাদুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘অনেকেই ভোট দিতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছেন। আমরা তাঁদের বারবার বলে দিচ্ছি। তবুও ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি অনেকেই বুঝতে পারছেন না।’
নগরীর টঙ্গিতে সফিউদ্দিন সরকারি একাডেমি অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ভোটকক্ষগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেলেও কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের দেখা যায়নি। কেন্দ্রের ১, ২, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বুথে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার আলমগীর খান বলেন, কারো এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ নেই। প্রার্থীরা নিজেরাই কিছু কিছু স্থানে এজেন্ট দেয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here